নভেম্বর ২৮, ২০২৪

বৃহস্পতিবার ২৮ নভেম্বর, ২০২৪

কুমিল্লায় নারী শিক্ষিকাদের স্বামীর ঠিকানায় বদলির আদেশ হাইকোর্টে বহাল

In Comilla, the order of transfer of female teachers to their husband's address is upheld by the High Court
কুমিল্লায় নারী শিক্ষিকাদের স্বামীর ঠিকানায় বদলির আদেশ হাইকোর্টে বহাল। ছবি: সংগৃহীত

কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলায় স্বামীর স্থায়ী ঠিকানা বদলি করা ১০ নারী শিক্ষিকাসহ ১১ জনের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান বন্ধে কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম বাহাউদ্দিন বাহারের আবেদনে সাড়া দেননি চেম্বার আদালত। আদালত ১০ নারী শিক্ষিকাসহ ১১ জনের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদানের ব্যবস্থা করতে হাইকোর্টের আদেশ বহাল রেখেছেন।

আজ সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এ আদেশ দেন। এ সময় আদালত আবেদনকারী এমপি বাহারের আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘স্বামীর স্থায়ী ঠিকানায় বদলির সুযোগ আইনে দেওয়া হয়েছে। তাই ঘরের বউকে সসম্মানে ঘরে তুলুন।’

আদালতে এমপি বাহারের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট সাঈদ আহমেদ রাজা। শিক্ষকদের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান ও অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া।

এর আগে গত ২০ সেপ্টেম্বর স্বামীর স্থায়ী ঠিকানা কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলায় বদলি করা ১০ নারী শিক্ষিকাসহ ১১ জনের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদানের ব্যবস্থা করতে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন করা হয়। কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য আ.ক.ম বাহাউদ্দিন বাহার আবেদনটি দাখিল করেন। আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা বলেন, বাহাউদ্দিন বাহার স্থানীয় জনপ্রতিনিধি। এছাড়া তিনি জেলা শিক্ষা বিষয়ক কমিটিরও সদস্য। এ কারণে তিনি হাইকোর্টের আদেশে সংক্ষুব্ধ হয়ে আবেদনটি করেছেন।

আবেদনের যুক্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোটার ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ হয়ে থাকে। এখন যদি অন্য জেলা থেকে শিক্ষকরা বদলি হয়ে কুমিল্লায় আসতে থাকেন, তাহলে বহিরাগত শিক্ষকদের দ্বারা কোটা পূরণ হয়ে যাবে। এতে কুমিল্লার শিক্ষক নিয়োগপ্রার্থীরা বঞ্চিত হবেন। এ কারণে কুমিল্লার স্থানীয় মানুষের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন করা হয়েছে।

শিক্ষকদের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া বলেন, এ কে এম বাহাউদ্দিন বাহার এই রিট মামলায় কোনো পক্ষ না। তাই তিনি এ আবেদন করতে পারেন না।

এর আগে গত ১৩ সেপ্টেম্বর আদালতের আদেশ পাওয়ার ৫ দিনের মধ্যে স্বামীর স্থায়ী ঠিকানা কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলায় বদলি করা ১০ নারী শিক্ষিকাকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। বদলি করা ১০ নারী শিক্ষিকাসহ ১১ জন শিক্ষকের যোগদানপত্র গ্রহণ না করায় বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ হবে না এবং কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলায় বদলি করা ১১ শিক্ষকের যোগদানপত্র গ্রহণ করার নির্দেশনা কেন দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করেন আদালত।

১৩ সেপ্টেম্বর বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহ ও বিচারপতি এ কে এম রবিউল হাসানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া।

দেশের বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করা ১০ নারীসহ ১১ শিক্ষকের যোগদানপত্র গ্রহণ না করায় বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা চ্যালেঞ্জ করে এবং কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলায় বদলি করা ১১ শিক্ষকের যোগদানপত্র গ্রহণ করার জন্য নির্দেশনা চেয়ে ১২ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করে মশিউর রহমান, ফজিলত পারভিন, উম্মে কুলছুম, দিল আফরোজ, আমিনাতুর রহমানসহ মোট ১১ জন শিক্ষক।

রিটে সচিব, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ মোট ৬ জনকে বিবাদী করা হয়।

রিটকারীদের আইনজীবী মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া বলেন, রিটকারীরা দেশের বিভিন্ন বিভাগ, সিটি কর্পোরেশন, জেলা এবং উপজেলার বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক এবং সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। রিটকারীদের মধ্যে একজন পুরুষ শিক্ষক এবং বাকি ১০ জনই নারী। রিটকারী মশিউর রহমানের স্থায়ী ঠিকানা কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলায়, কিন্তু নিয়োগের সময় তিনি সদর দক্ষিণ উপজেলায় নিয়োগ প্রাপ্ত হয়েছিলেন।

অন্য ১০ জনই নারী শিক্ষক। তারা বিভিন্ন বিভাগ, সিটি কর্পোরেশন, জেলা এবং উপজেলায় নিয়োগ প্রাপ্ত হয়েছিলেন। দীর্ঘদিন বদলি বন্ধ থাকায় তারা বদলি হতে পারেননি। সম্প্রতি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বদলি করার উদ্দেশ্যে “সমন্বিত অনলাইন বদলি নির্দেশিকা (সংশোধিত) ২০২২” নামে বদলি নির্দেশিকা জারি করেন। ওই নির্দেশিকার নির্দেশনা শিক্ষকদের তাদের স্থায়ী ঠিকানায় এবং নারী শিক্ষকদের তাদের স্বামীর স্থায়ী ঠিকানায় বদলির সুযোগ প্রদান করেছে।