
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৬ জুলাই গণঅভ্যুথানের এক বছর পূর্তি এবং ‘ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান দিবস-২০২৫’ উপলক্ষ্যে নানা কর্মসূচি পালন করেছে প্রশাসন। বিভিন্ন আয়োজনের মধ্যে ছিল বর্ণাঢ্য র্যালি, আলোচনা সভা, জুলাই সম্মাননা স্মারক, বৃক্ষরোপণকর্মসূচি, সেমিনার‚ মিলাদ‚ আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও ডকুমেন্টারি প্রদর্শনী ইত্যাদি।
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে এ কর্মসূচিগুলো উদযাপন করা হয়। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাসুদা কামাল। উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোলায়মান‚ প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আবদুল হাকিম ও রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনা সভায় কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোলায়মান বলেন‚ ‘৫-আগস্টের পরবর্তী সময়ে আমরা লক্ষ্য করেছি মানুষ সকাল বিকাল নিজের মূল্যবান মতামত প্রকাশ করতে পারছে। বলতে পারছে যে আগামী দিনের এই কাজে আমি থাকবো কি থাকবো না। কিন্তু ৫ই আগস্টের আগে এমন মতামত প্রকাশ করতে গিয়ে একশবার টাইপ করে আবার ডিলিট করতে হয়েছে, নিজের মতামত প্রকাশ করতে পারেনি। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে নিজের মতামত এবং অবস্থান জানানোর জন্য, নতুন করে স্বপ্ন দেখা এবং তা বাস্তবায়ানের জন্য এই যে প্লাটফর্মগুলো দাঁড়িয়েছে এগুলোকে ধারণ করতে হবে, আলোচনার মাধ্যমে আমাদের ভুল-ত্রুটি গুলো শোধরাতে হবে, একতা, সততা এবং নিয়মানুবর্তিতার মাধ্যমে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে হবে।’
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন‚ ‘৫ই আগস্ট একটা স্মরণীয় দিন। এ ধরনের একটা দিন আসতে শত বছর অপেক্ষা করতে হয়৷ শত বছর লাগে এমন এক সন্ধিক্ষণে পৌঁছতে। সবাই এক কাতারে এসে দাড়িয়েছিলো। এই শক্তি গত বছর বাধ্য করেছিলো চরম এক স্বৈরশাসক-কে দেশ ছেড়ে পালাতে। দুঃখজনক হলেও সত্য মাথাটা পালিয়ে গেছে বডিটা এখনো আছে। এই বডির জ্বালাতন‚ যন্ত্রণা প্রতি পদে পদে আমাদের ভোগ করতে হচ্ছে। মন্ত্রণালয়ে দুর্নীতি একটুও কমেনি। যারা যে টেবিলে বসা ছিল তারা সেই টেবিলেই আছে।’
তিনি আরও বলেন‚ ‘কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে গোপনে দুর্নীতি চলছে আমরা তা বুঝতে পারছি‚ কিন্তু ধরতে পারছি না। আমি সকলের সহযোগিতা নিয়ে চেষ্টা করবো, সারাদেশে না পারলেও যতদিন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে আছি, ততদিন এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুর্নীতির মূলোৎপাটন করবো ইনশাআল্লাহ। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উদ্দেশে আমি বলবো, শিক্ষকরা চাইলে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কালচার বদলে দিতে পারেন, এবং সেটিকে একটি মানসম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করতে পারেন। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় অচিরেই অগ্রগতির পথে এগিয়ে যাবে। বর্তমানে এটি দ্বিতীয় গ্রেডে অবস্থান করছে, কিন্তু খুব শিগগিরই আমরা প্রথম গ্রেডে উন্নীত হবো। এই লক্ষ্য অর্জনে শিক্ষক, শিক্ষার্থী সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।’
উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাসুদা কামাল বলেন‚ ‘জুলাই আন্দোলন শুধু একটি তারিখ নয়, এটি সাম্য, ন্যায়বিচার ও গণতন্ত্রের প্রতীক। এই আন্দোলন আমাদের শিখিয়েছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোই একজন সচেতন নাগরিকের কর্তব্য। তিনি বলেন, আমরা একটি স্বৈরশাসককে বিদায় করতে পেরেছি, কিন্তু স্বৈরাচারী আচরণ কি দূর করতে পেরেছি? জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম শক্তি ছিল তারুণ্য। সেই তারুণ্যকে ধারণ করতে না পারলে আন্দোলনের প্রকৃত চেতনা ধরে রাখা সম্ভব নয়। শিক্ষার্থীরা যেন নৈতিকতা, মানবিকতা ও সাম্যের মূল্যবোধে গড়ে ওঠে এটাই মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত।’