নভেম্বর ২৩, ২০২৪

শনিবার ২৩ নভেম্বর, ২০২৪

কুবিতে জ্ঞান পিপাসুদের উদ্দীপ্ত প্লাটফর্ম রিডার্স’র ১ম বর্ষপূর্তি আজ

Rising Cumilla - Today is the 1st year anniversary of Readers, a platform for knowledge thirsters
ছবি: প্রতিনিধি

জ্ঞান পিপাসুদের কাছে বই এক অমূল্য সম্পদ। অনেকের কাছে অকৃত্রিম বন্ধু। বইয়ের প্রতি ভালবাসা থেকে ব্যতিক্রমী এক উদ্যোগ নিয়েছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী নাফিস আহমেদ ভূইঁয়া। ২০২৩ সালের ২৩ নভেম্বর তিনি গড়ে তুলেছে ‘রিডার্স ‘—নামে একটি প্লাটফর্ম। আজ ১ম বর্ষপূর্তি উদযাপন করছে সংগঠনটি।

কুবি রিডার্সের স্বপ্নদ্রষ্টা ইংরেজি বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নাফিস আহমেদ ভূইয়া। তিনি ২০১৯ সাল থেকে এ রকম একটি প্লাটফর্ম গড়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। ‘রিডার্স’ শিক্ষার্থীদের বই পড়ার সংস্কৃতি সৃষ্টি করতে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। ইংরেজি বিভাগের ১৫ তম আবর্তনের শিক্ষার্থী আনিসুর রহমান ও জাকিয়া সুলতানা রিডার্স পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন।

রিডার্সের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নাফিস আহমেদ ভূঁইয়া বলেন, “অক্সব্রিজের ‘ইউনিভার্সিটি উইটস’ এবং রবিন উইলিয়ামসের ‘ডেড পোয়েটস সোসাইটির’ আদলে গড়ে তোলা রিডার্সের একমাত্র লক্ষ্য বই পড়ার সংস্কৃতি গড়ে তোলা। ৩য় বর্ষে অধ্যয়নকালে বাইতুল মোকাররমের ইসলামী বইমেলায় পড়ন্ত বিকেলে যখন দেখি মসজিদের আঙিনায় তরুণ হৃদয়গুলো থোকায় থোকায় বসে জ্ঞান আহরণ করছে তখন আফসোস হল এ রকম পরিবেশ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নেই বলে। দুঃখ লাগে জ্ঞানচর্চার কেন্দ্রে জ্ঞান বাদে সবকিছুই নিয়মিত চর্চা হয়। শপথ করি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে না হোক অন্তত এর বাইরে স্বতন্ত্র কোনো পাঠক সমাজ গড়ে তুলব। তবে তার পূর্বে বাছাইকৃত কয়েকজন প্রতিভাবান তরুণ-তরুণীদের নিয়ে পরখ করে নেয়া উচিত স্বপ্নটি সত্যই বাস্তবায়নযোগ্য কিনা।”

তিনি বলেন, “আমাদের সাহিত্য পত্রিকা ‘কাক, কবিতা ও কলা’ এই প্রকল্পের একটি ধাপ। আমরা বিশ্বাস করি সফল হতে আরো অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে। আমি বিশ্বাস করি রিডার্সের নতুন ডিরেক্টর জুটি আনিস ও জাকিয়া, সবার সাথে রিডার্সকে কাঙ্খিত সফলতায় নিয়ে যাবে। আমি রিডার্সকে কেবল জাতীয় পর্যায়ে নয় বরং আন্তর্জাতিক অঙ্গণে নিয়ে যেতে উদ্যমী। মতপার্থক্য থাকবেই তবে ভিন্ন মতের নান্দনিকতাকে উপভোগ করে আমরা পরমতসহিষ্ণু এবং পড়ুয়া জাতির প্রত্যাশা রাখি।”

ছবি: প্রতিনিধি

রিডার্সের সদস্য সুমাইয়া তাবাসসুম বলেন, “সাহিত্য ও শিল্পের প্রতি সুপ্ত ভালোবাসা ম্যাগাজিনের মাধ্যমে প্রকাশ করতে পেরে আমি আনন্দিত। ম্যাগাজিনের সাথে জড়িত হয়ে কাজ করার মাধ্যমে আমি এই শিল্প ও সাহিত্যানুরাগকে আরো কাছে থেকে অনুভব করতে পেরেছি। ‘কাক,কবিতা ও কলা’—ম্যাগাজিন প্রকাশনার প্রক্রিয়া আমাকে দিয়েছে একটি প্রাতিষ্ঠানিক পরিবেশে কাজ করার অভিজ্ঞতা দিয়েছে। একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে কাজ সম্পন্ন করার চাপ, দলগতভাবে কাজ করার দক্ষতা এবং সম্পাদনার মতো কাজগুলো খুব কাছে থেকে উপলব্ধি করেছি। এই অভিজ্ঞতা আমাকে শিখিয়েছে—সাহিত্য শুধুমাত্র লিখন প্রক্রিয়া নয়, এটি যোগাযোগের মাধ্যম, পরিবর্তনের হাতিয়ার। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মেধা ও মনন বিকাশে এই ধরনের ম্যাগাজিনগুলোর আরো বেশি প্রকাশ ও প্রচারণা করা প্রয়োজন। ভবিষ্যতেও এই ম্যাগাজিন নিয়ে কাজ করতে চাই। সকল সাহিত্য ও শিল্পানুরাগী শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে “কাক, কবিতা ও কলা” হয়ে উঠুক অসাধারণ ও অনবদ্য সুপ্ত ধারা।”

ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আওসাফ আলী সামি বলেন, “লিখালিখির শখ ছোটবেলা থেকেই। ৪র্থ শ্রেণি থেকে উপরের শ্রেণির বাংলা বইগুলোর কর্ম অনুশীলনী, সৃজনশীল কাজগুলো করাতেন শিক্ষকরা। অন্তরমুখী হওয়ার কারনে খাতার পিছনের গল্পগুলো কাগজে আসবে ভাবিনি কখনো। রিডার্স আমাকে সে সুযোগ করে দিয়েছে। খাতার পিছনে গল্প লিখা আর সুসংগঠিত কোন ম্যাগাজিনে গল্প লেখার তফাত অনেকখানি। প্রথম করেছি, কাজেই শিখার সুযোগ ছিল অনেক। রিডার্স আরও বড় হোক, শুধু আমার জন্য নয় আরও অনেকের নতুন কিছু শেখার সুযোগ সৃষ্টি করুক ও নতুন ভাবে ভাবার, বইকে জানার একটা মাধ্যম হোক রিডার্স এটাই প্রত্যাশা।”

রিডার্সের ডিরেক্টর আনিসুর রহমান বলেন, “বই এমন এক মাধ্যম যা মানুষের চিন্তাভাবনা ও মানসিকতা পরিবর্তন করতে সাহায্য করে। আর যে পড়ে সেই রিডার্স। কিন্তু বর্তমান সময়ে বইয়ের প্রতি আগ্রহ দিন দিন কমছে। আমরা এটা নিয়েই কাজ করছি। রিডার্স এর মাধ্যমে আমরা নতুন পাঠক সৃষ্টি করার পাশাপাশি পুরাতন পাঠকদের একত্রিত করে একটি চেতনা-সমৃদ্ধ, সৃজনশীল এবং দায়িত্বশীল সার্কেল গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি। আমাদের বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে আমরা অন্যদের মাঝে বইয়ের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি, সৃজনশীল আলোচনা এবং সামাজিক দায়বদ্ধতার অনুভূতি জাগিয়ে তুলতে চেষ্টা করছি।”