হাজারো বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের তীর্থভূমি কুমিল্লা। এটি অবিভক্ত ভারতের স্বাধীন ত্রিপুরা রাজ্যের একটি অংশ ছিল। বর্তমানে কুমিল্লা নামে জেলাটি কিছুকাল আগেও চাঁদপুর আর ব্রাহ্মণবাড়িয়া নিয়ে ছিল একটি বৃহৎ জেলা।
কুমিল্লা, স্বাধীন দেশের অংশ হলেও ঐতিহ্যগত কারণেই ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সঙ্গে অলিখিত বন্ধন হিসেবেই যেন চিহ্নিত হয়ে রয়েছে এর নাম। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে মহাত্মা গান্ধী স্বদেশি আন্দোলনের যে ডাক দিয়েছিলেন, সেখানে হাতে কাটা সুতোয় বোনা খদ্দরে ছিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। মহাত্মা গান্ধী সে সময় নিজে কুমিল্লা এসে খদ্দরে প্রসারে সবাইকে অনুপ্রাণিত করে গেছেন। তারই স্মৃতি চিহ্ন হিসেবে এখনো কুমিল্লায় গান্ধীর আশ্রম ‘অভয় আশ্রম’ নামে টিকে আছে।
অন্যদিকে, কালের পরিক্রমায় কুমিল্লা আর ত্রিপুরায় খাদির তৈরি বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী জনগণের কাছে এখনো সমাদৃত। তবে শুরু থেকেই বিশেষ করে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে কুমিল্লার খাদি বিভিন্ন বিবর্তনের মধ্য দিয়ে জাতীয় পর্যায় ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আজ তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য নিয়ে বিশেষ স্থান দখল করে নিতে পেরেছে।
কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী খাদির পোশাক সুখ্যাতি রয়েছে দেশ ও বিদেশে। কুমিল্লায় থেকে খাদি কাপড় ছাড়া খালি হাতে ফিরেছেন এমন লোক কমই পাওয়া যাবে। অফ হোয়াইট রং, মোটা কাপড়। দেখলেই যে কেউ বুঝতে পারে, কাপড়টা খাদি। এক সময় খাদি কাপড় শালেই বেশি ব্যবহার করা হলেও এখন ব্যবহারে এসেছে বৈচিত্র্য। খাদি কাপড় দিয়ে এখন তৈরি হচ্ছে পাঞ্জাবী, ফতুয়া, শার্ট, থ্রি-পিস, শাড়ি এমনি বিছানার চাদরও। অনেকে আবার পছন্দমতো বানানোর জন্য কিনেন থানকাপড়ও।
কুমিল্লার খাদি কাপড় বিক্রেতা মনির হোসেন বলেন, খাদি কাপড় চলে ভালো। বৈশাখ বা ঈদ না, সারা বছরই এ কাপড়ের চাহিদা রয়েছে। খুচরা কাপড় বেশি বিক্রি হয়। এ কাপড় দিয়ে পাঞ্জাবি, শার্ট, জোব্বা তৈরি হয়। খাদি কাপড় দিয়ে মেয়েরাও পোশাক বানায়।
কুমিল্লা শহরের উল্লেখযোগ্য দোকান- মনোহরপুরে রয়েছে খাদিঘর, পূর্বাশা গিফট অ্যান্ড খাদি-২, রাজগঞ্জের আবরণী, প্রসিদ্ধ খাদি ভান্ডার, কান্দিরপাড় এলাকার খাদি মিউজিয়াম, নিপুণ খাদি ফ্যাশন, খাদি বিপণি, কুমিল্লা খাদি ভান্ডার, খাদি প্রিয়াঙ্গন, খাদি কুটির শিল্প ভবন, খাদি ইয়াছিন বস্ত্রালয়, কুমিল্লা খদ্দর, খাদি শিল্প ভবন, খাদি কটেজ, শিল্পী খাদি বিতান, খাদি বস্ত্র বিতান, পূর্বাশা গিফট অ্যান্ড খাদি-১, জ্যোৎস্না স্টোর, খাদি বসুন্ধরা, শুভেচ্ছা খাদি বিতান, আল আমিন খাদি ঘর, খাদি বস্ত্রালয় ও খাদি বস্ত্র বিতান।
সরেজমিনে কুমিল্লার খাদি কাপড়ের দোকান ঘুরে দেখা গেছে, পাঞ্জাবি ৪০০-১২০০, শার্ট ৩৫০-৭৫০, থ্রি-পিস ৫০০-১৫০০ ও শাড়ি বিক্রয় হচ্ছে ৭৫০- ১৬০০ টাকার মধ্যে। আধুনিকতার ছোঁয়ায় খাদি কাপড়ে এসেছে বৈচিত্র্য। নতুন নতুন ডিজাইনে আগ্রহ বাড়ছে ক্রেতাদের মধ্যে।
এ বিষয়ে খাদি কাপড় বিক্রেতা অপর ব্যবসায়ী তানভীর আহমেদ বলেন, এখন তো খাদি কাপড়ে রঙ ও ডিজাইনের ভিন্নতা এসেছে। দেশীয় ফ্যাশন হাউজগুলোতে খাদির কদর বেড়েছে। মানুষের চাহিদার কথা বিবেচনা করে তারা নিত্যনতুন ডিজাইনের খাদি কাপড়ের পোশাক বাজারে আনছে। খাদি কাপড় মূলত কুমিল্লার ঐতিহ্য। খাদি বেশ জনপ্রিয়। চরকা ও হস্তচালিত তাঁতে বোনা হয় খাদি কাপড়। প্রায় সারা বছরই খাদির চাহিদা থাকে। তবে যে উৎসবে চাহিদা বেড়ে যায়। এখন আধুনিকতার ছোঁয়ায় খাদি কাপড় আরও অনন্য হয়েছে।
এ বিষয়ে কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য গবেষক আহসানুল কবির বলেন, খাদির গোড়াপত্তন হয়েছে ১০০ বছরের বেশি সময় আগে। ওই সময় শুধু খাদি কাপড় নয়, কুমিল্লার বেনারসি শাড়িরও তুমুল চাহিদা ছিল। সারা বিশ্বেই কুমিল্লার শাড়ি ও খাদি কাপড়ের নামডাক ছিল। স্বদেশি আন্দোলনের সময় মহাত্মা গান্ধী বিদেশি পণ্য বয়কটের ডাক দেন। মোটা কাপড়, মোটা ভাত-সর্বত্র এমন আওয়াজ ওঠে। স্বদেশি আন্দোলনের পর খাদি কাপড়ের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে ওঠে। মহাত্মা গান্ধী নিজেও খাদির চাদর পরিধান করতেন। কুমিল্লার মানুষ খাদি কাপড় পছন্দ করতেন। বড় বড় নেতারা খাদির পায়জামা, চাদর, পাঞ্জাবি পরে গৌরববোধ করতেন। এটার প্রচলন গত ৩০ বছর আগেও ব্যাপক হারে ছিল। খাদি কুমিল্লাকে ব্র্যান্ডিং করে। (সূত্র: বাসস)
সম্পাদক : শাদমান আল আরবী | নির্বাহী সম্পাদক : তানভীর আল আরবী
ঠিকানা : ঝাউতলা, ১ম কান্দিরপাড়, কুমিল্লা-৩৫০০। ফোন : ০১৩১৬১৮৬৯৪০, ই-মেইল : [email protected], বিজ্ঞাপন: [email protected], নিউজরুম: [email protected] © ২০২৩ রাইজিং কুমিল্লা সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত। | Design & Developed by BDIGITIC