স্মার্টফোনের পর্দায় যখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) জাদুতে নিজের হাসিমুখ ফ্যান্টাসি জগতে বদলে ফেলেন, কিংবা টিকটকের মজার ফিল্টারটি চালান, তখন কি একবারও ভেবে দেখেছেন এই ক্ষণিকের আনন্দ পরিবেশের ওপর কতটা চাপ সৃষ্টি করছে?
আমরা অনেকেই এই অত্যাশ্চর্য প্রযুক্তির পেছনের ভয়াবহতাকে উপলব্ধি করি না। একটি ছবি তৈরি করতে আপনার হয়তো এক সেকেন্ডও লাগে না, কিন্তু সেই মুহূর্তের পেছনে কাজ করে বহু দূরের ডেটা সেন্টার। এই ডেটা সেন্টারগুলো ছবিটিকে আপনার ফোনে পাঠাতে যে বিপুল পরিমাণ কম্পিউটিং ক্ষমতা ব্যবহার করে, তাতে প্রয়োজন হয় গিগাওয়াট বিদ্যুৎ। আর সেই সার্ভারগুলোকে ঠান্ডা রাখতে খরচ হয় লিটার লিটার পানি।
বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী এআই মডেল চ্যাটজিপিটির মতো একটি মডেলকে প্রশিক্ষণ দিতে প্রতি ঘন্টায় প্রায় ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ খরচ হয়। এই পরিমাণ বিদ্যুৎ দিয়ে বাংলাদেশের প্রায় ৪০ হাজার গ্রামীণ পরিবার একদিন অনায়াসে চলতে পারে।
অন্যদিকে, গুগল তাদের সার্ভার ঠান্ডা রাখার জন্য প্রতিদিন প্রায় ২১ লাখ লিটার পানি ব্যবহার করে। যা প্রায় ৪২০০ জন মানুষের একদিনের পানীয় জলের সমান। অথচ বিশ্বে ব্যবহারের উপযোগী মিষ্টি জলের পরিমাণ মাত্র ০.৫ শতাংশ।
বর্তমানে বিশ্বের ৭২০ মিলিয়ন মানুষ তীব্র পানি সংকটে ভুগছে। এই পরিস্থিতিতে এআইয়ের ক্রমবর্ধমান ব্যবহার যেন সেই সংকটের আগুনে আরও ইন্ধন যোগাচ্ছে।
কোথায় হচ্ছে এই বিপুল শক্তির অপচয়?
প্রয়োজনীয় কাজের পাশাপাশি এআইয়ের বহু অপচয়মূলক ব্যবহার বাড়ছে:
বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, এই অপব্যয় চলতে থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে এআই বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম কার্বন ও জলগ্রাসী প্রযুক্তিতে পরিণত হবে। ২০২৭ সালের মধ্যেই এআই প্রযুক্তিতে জলের ব্যবহার বছরে ৬.৬ বিলিয়ন ঘনমিটার ছাড়িয়ে যেতে পারে—যা ডেনমার্কের পুরো বছরের জলের চাহিদার ৪-৬ গুণ!
তাহলে কি আমরা এআই ব্যবহার বন্ধ করে দেব?
একেবারেই না। এআই আমাদের জীবনে অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। তবে এর জন্য প্রয়োজন বুদ্ধিদীপ্ত এবং দায়িত্বশীল ব্যবহার।
বিশ্বের বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো ইতিমধ্যেই ‘গ্রিন এআই’ বা পরিবেশবান্ধব কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দিকে ঝুঁকছে। হাগিং ফেস, ওপেনএআই, গুগল ও মাইক্রোসফটের মতো প্রতিষ্ঠান সৌরবিদ্যুৎ, বায়ুচালিত টারবাইন ও উন্নত জল ব্যবস্থাপনার মতো পদক্ষেপ নিচ্ছে।
আমাদের দায়িত্বই মুখ্য
প্রতিদিন অসংখ্য অপ্রয়োজনীয় ছবি তৈরির পরিবর্তে যদি আমরা এআইয়ের ব্যবহার করি:
তবে এই প্রযুক্তি সত্যিই মানবজাতির বন্ধু হিসেবে কাজ করবে। প্রযুক্তি নিঃসন্দেহে শক্তিশালী, কিন্তু আমাদেরকেই নিশ্চিত করতে হবে যেন তা পরিবেশের শত্রুতে পরিণত না হয়। আমাদের প্রতিটি সচেতন পদক্ষেপই একটি টেকসই ভবিষ্যৎ গড়তে সাহায্য করতে পারে।
সম্পাদক : শাদমান আল আরবী | নির্বাহী সম্পাদক : তানভীর আল আরবী
ঠিকানা : ঝাউতলা, ১ম কান্দিরপাড়, কুমিল্লা-৩৫০০। ফোন : ০১৩১৬১৮৬৯৪০, ই-মেইল : [email protected], বিজ্ঞাপন: [email protected], নিউজরুম: [email protected] © ২০২৩ রাইজিং কুমিল্লা সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত। | Design & Developed by BDIGITIC