মে ১০, ২০২৫

শনিবার ১০ মে, ২০২৫

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ

ছবি: প্রতিনিধি

দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে সম্প্রতি ৯ মে দিবাগত রাত প্রায় ১২:৪৫ এর দিকে অনুষ্ঠিত হয়েছে একটি ব্যতিক্রমধর্মী প্রতিবাদ কর্মসূচি। দেশের প্রাচীনতম ও দীর্ঘদিনের ক্ষমতাসীন এবং বর্তমানে ক্ষমতাচ্যুত রাজনৈতিক দল ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে শিক্ষার্থীরা আয়োজন করে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ। এতে অংশ নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

সম্প্রতি বিগত ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগের আমলে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, নির্বাচনী অনিয়ম, মানবাধিকার লঙ্ঘন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের দখলদারিত্ব সহ বিভিন্ন বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ ও রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই কর্মসূচির ডাক দেন। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের স্বাধীন প্ল্যাটফর্ম থেকে এ কর্মসূচির আহ্বান জানানো হয়, যা দ্রুত সাড়া ফেলে দেয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে।

৯ মে শুক্রবার দিবাগত রাত প্রায় ১২:৪৫ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা থেকে শুরু হয় মিছিলটি, এবং ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক সংলগ্ন এলাকার সামনে এসে প্রতিবাদ সমাবেশ ও সড়ক অবরোধের মাধ্যমে শেষ হয়।

শিক্ষার্থীরা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা ও শিক্ষার পরিবেশ চাওয়াসহ বিভিন্ন স্লোগানের মাধ্যমে মিছিলটি শেষ হয়।

বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা বলেন, “ক্ষমতাচ্যুত দল ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ধরে রাষ্ট্রীয় যন্ত্র ব্যবহার করে বিরোধী মত দমন করেছে। নির্বাচন প্রহসনে পরিণত হয়েছিল, ভিন্নমত দমন ছিল নিয়মিত চর্চা, শিক্ষাঙ্গনে দলীয় লেজুড়বৃত্তি ও দখলদারিত্ব শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করেছে।

এসব কারণে তারা মনে করেন, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের পরিপন্থী এক দলে পরিণত হয়েছে; যার অস্তিত্ব রাষ্ট্র ও সমাজের জন্য হুমকিস্বরূপ।”

এক শিক্ষার্থী বলেন, “যে দল বাকস্বাধীনতার জায়গা বন্ধ করে দেয়, শিক্ষাঙ্গনে দখলদারিত্ব কায়েম রাখে এবং নিজের স্বার্থে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করে, তারা রাষ্ট্রবিরোধী শক্তি। তাই তাদের নিষিদ্ধ করাই যৌক্তিক। এটি কোনো দলীয় এজেন্ডা নয়, এটি আমাদের বাঁচার দাবি। আমরা চাই, মত প্রকাশের স্বাধীনতার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তবুদ্ধির চর্চা হোক।”

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত কর্মসূচি সম্পর্কে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়নি। তবে একজন সিনিয়র শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “শিক্ষার্থীরা তাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতার চর্চা করছে, তবে কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার মতো বিষয় অত্যন্ত স্পর্শকাতর, এটি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের বিষয়।”

এই দাবিকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু হয়েছে ব্যাপক আলোচনা। অনেকেই এটিকে শিক্ষার্থীসমাজের সাহসী অবস্থান ও পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। অনেকের মতে, এই ঘটনা বাংলাদেশের তরুণ সমাজে রাজনৈতিক সচেতনতার নতুন মাত্রা যোগ করবে।

যদিও একটি দল নিষিদ্ধ করার দাবি বাস্তবায়নের ক্ষমতা শিক্ষার্থীদের নেই, তবে এর মধ্য দিয়ে ক্ষমতাসীন ও ক্ষমতাচ্যুতদের প্রতি যে অসন্তোষ জমে আছে তরুণ সমাজে, সেটি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

সবশেষে এটাই বলা যায়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এই মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ শুধু একটি সংঘটিত ছাত্র আন্দোলন নয়, বরং এটি দেশের উচ্চশিক্ষা ও রাজনৈতিক বাস্তবতার একটি প্রতিফলন।

রাষ্ট্রযন্ত্র, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, এবং রাজনৈতিক নেতৃত্ব এই বার্তা কীভাবে নেবে, তা আগামী দিনের রাজনৈতিক দৃশ্যপট অনেকাংশে নির্ধারণ করবে।

আরও পড়ুন