নভেম্বর ২২, ২০২৪

শুক্রবার ২২ নভেম্বর, ২০২৪

আওয়ামী দোসরদের সম্মাননা দেওয়ার অভিযোগ, নাহিদের সম্মাননা প্রত্যাখ্যান

Rising Cumilla - Complaints about giving honor to Awami Dosar, denying honor to Nahid
ছবি: প্রতিনিধি

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) ১৬ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোঃ নাহিদ ইসলাম। সেখানে তাকে দেওয়া সম্মাননা স্মারক প্রত্যাখ্যান করেন তিনি।

শনিবার (১২ অক্টোবর) দুপুর ১২ টায় আলোচনা সভায় তিনি এই সম্মাননা প্রত্যাখ্যান করেছেন।

উপদেষ্টা নাহিদের বক্তব্যের এক পর্যায়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত দুই আলোচক কে সম্মাননা স্মারক দেওয়ায় ক্ষোপ প্রকাশ করেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা বলেন, আওয়ামী লীগের দোসরদের আমাদের সামনে সম্মাননা দেওয়া আমরা কোনভাবেই মেনে নিতে পারি না। মঞ্চে বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর কমলেশ চন্দ্র রায় বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি। যেখানে আবু সাঈদ হত্যা মামলার আসামি মশিউর রহমান সেই বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক। অন্যদিকে কলা অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. শফিকুর রহমান গত ১৩ই আগস্ট কালের কন্ঠে একটি কলাম লিখেছিলেন সেখানে তিনি একটি লাইন লিখেন ‘আবু সাঈদ নিহত হওয়ার পরেও পরিস্থিতি সামলানোর পার্যায়ে ছিল” এই লাইনটি দ্বারা তিনি কি বুঝিয়েছেন আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা জানতে চাই।

এ সময় উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম শিক্ষার্থীদের অভিযোগ শুনে সরাসরি তার সম্মাননা স্মারক প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি বলেন, যে মঞ্চ থেকে আওয়মী লীগের দোসরা সম্মাননা স্মারক নিয়েছিলেন সেই একই মঞ্চ থেকে আমি সম্মাননা স্মারক নিচ্ছি না। হয়তো কোন একদিন ফ্যাসিবাদ মুক্ত বেরোবিতে আসবো এবং প্রকৃত সম্মাননা নিব। এছাড়া তিনি বেরোবি উপাচার্যকে এসব বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে বলেন।

এইদিকে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ শুনে প্রফেসর ড. শফিকুর রহমান বলেন, আমার সেই কলামটি শিরোনাম ছিল “আবু সাঈদ যখন রাজনীতিবিদদের শিক্ষক”। আমি শুরু থেকেই শিক্ষার্থীদের সাথে ছিলাম। ফেসবুকে লেখালেখি করেছিলাম। তারপরও যেহেতু আজ আমার কলামের একটা লাইন নিয়ে আমার দিকে আঙ্গুল তোলা হয়েছে। তাই আমাকে যে সম্মাননা স্মারক দেওয়া হয়েছে সেটি আমি শিক্ষার্থীদের মতকে সম্মান জানিয়ে স্যালেন্ডার করলাম।

অনুষ্ঠানের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো.শওকাত আলী বলেন, আমি এসেছি এখনো একমাসও হয়নি। আমাকে তো মানুষগুলো চিনতে হবে। আমি সবকিছু শিক্ষার্থীদের সাথে আলাপ আলোচনা করে পদক্ষেপ নিই। আর আমি তো মানুষগুলোকে বলতে পারি না আপনারা পদ থেকে সরে যান। আমাকে সময় দেন ইনশাআল্লাহ সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।

উল্লেখ্য, দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে “ধন্য বেরোবি, গড়বো দেশ, আবু সাঈদের বাংলাদেশ” শ্লোগানকে ধারণ করে দিন ব্যাপী নানা কর্মসূচি পালন করা হয়। সকাল ১০টায় জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় দিবসটির আনুষ্ঠানিকতা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মোঃ নাহিদ ইসলাম এবং ইউজিসির পতাকা উত্তোলন করেন অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলন করেন অনুষ্ঠানের সভাপতি ও উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ শওকাত আলী। পরে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়।

সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও অনুষ্ঠানের অন্যান্য অতিথিবৃন্দকে সাথে নিয়ে নাম ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোঃ নাহিদ ইসলাম।

পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবর্ষিকী উপলক্ষে ক্যাম্পাসে বর্ণিল আনন্দ শোভাযাত্রা বের করা হয়। বাদ্যের তালে তালে শোভাযাত্রাটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে শুরু করে পার্কের মোড় প্রদক্ষিণ করে ক্যাম্পাসে ফিরে এসে শেষ হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ বর্ণিল এই শোভাযাত্রায় অংশ নেন।
শোভাযাত্রা শেষে দিবসটি স্মরণীয় করে রাখতে অতিথিবৃন্দ বৃক্ষরোপণ করেন।

এছাড়া বিকেলে স্বাধীনতা স্মারক মাঠে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বাদ আসর কেন্দ্রীয় মসজিদে দুআ ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আলোকসজ্জ্বাসহ নানাভাবে সাজানো হয় ক্যাম্পাস।