মঙ্গলবার ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

সারা বছর সবজির চাহিদা মেটাতে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ঢালি পদ্ধতিতে চাষাবাদ

সঞ্জয় শীল, নবীনগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

Cultivation using the Dhali method is becoming popular to meet the demand for vegetables throughout the year.
সারা বছর সবজির চাহিদা মেটাতে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ঢালি পদ্ধতিতে চাষাবাদ/ছবি: প্রতিনিধি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ঢালী পদ্ধতিতে সবজি চাষাবাদ। লাভবান কৃষকরা এক বার পূঁজি খাটিয়ে দীর্ঘ দিন পর্যন্ত চাষাবাদ করার সুযোগ পাচ্ছেন। স্থানিয় কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ ও সহযোগিতায় কৃষকদের উৎসাহিত করছে মৌসুমী সবজি বারো মাস উৎপাদনে। এতে ক্রেতারা যেমন সারা বছর মৌসুমী সবজি পাচ্ছেন তেমনি লাভবান কৃষকরা কামাচ্ছেন মুনাফা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার তথ্য মতে, বর্ষা মৌসুমে চাষাবাদ যোগ্য আবাদী জমির পরিমান মোট আবাদী জমির মাত্র ৬ শতাংশ। এর মধ্যে অনেক জমি পড়ে থাকে পরিত্যক্ত হয়ে। মোট আবাদী জমির ৯৭৬৮ হেক্টর জমি হাওর অঞ্চলে, ১২৪১৫ হেক্টর জমি দুই ফসলি ও ১৮৯৬ হেক্টর জমিতে এক কালিন আর ৪৫০০ হেক্টর বাড়ির আশেপাশের ও বাড়ির আঙ্গিনার জমিতে সারা বছর সবজি চাষ করা গেলেও বাকি আবাদী জমি গুলো বর্ষায় ও বন্যায় ৪ মাস থেকে ৬ মাস পর্যন্ত পানির নিচে তলিয়ে থাকে। এককালিন ধানের চাষ ছাড়া এখানে অন্য ফসল ফলানোর আগ্রহ কম থাকায় বেশির ভাগ জমিই থাকতো পরিত্যক্ত। অনেকে দুই ফসলি জমিতে একবার ধান চাষ করে সবজি চাষ করলেও তা স্থানিয় বাজার গুলোতেও চাহিদা মতো যোগান দিতে পারে না।

এতে বছরের বেশির ভাগ সময় স্থানিয় কৃষকরা বেকার হয়ে পড়েন। অনেকে বেছে নেন অন্য কোন পেশাকে। বছরের এককালিন সবজি চাষে বাড়তি খরচ ও মৌসুমি সবজিতে (সিজনাল) দাম কম পাওয়ায় হতাশায়ও ভুগেন অনেক কৃষক-কৃষাণী। অনেক কৃষক সবজি চাষের পাশাপাশি গরু-ছাগল লালন পালনে সময় ব্যয় করলেও পূঁজির অভাবে থাকা কৃষকদের মাঝে পানিতে ডুবে থাকা ঢালী পদ্ধতিতে চাষাবাদ নতুন আলোর দিশা দেখাচ্ছেন। চাষাবাদে বিমূখ হয়ে যাওয়া কৃষকরাও ফিরছেন ঢালী পদ্ধতিতে চাষাবাদের কাজে।

Rising Cumilla - Vegetable cultivation using the cast-iron method is becoming increasingly popular in Nabinagar, Brahmanbaria.
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ঢালী পদ্ধতিদ/ছবি: প্রতিনিধি

পৌর এলাকার আলীয়াবাদ বাজারের সবজি বিক্রেতা আবুল হোসেন জানান, আগে মৌসুমী ফল দামের সময় বিক্রি করতে না পারলে পঁচে যেতো। সবজি আনতে হতো ঢাকার কাওরান বাজার থেকে ট্রাকে করে। এতে আমাদের যেমন দামে বিক্রি করতে হতো তেমনি পঁচে গেলে পূঁজিও চলে যেতো। এখন সারা বছর টাটকা সবজি পাওয়া যায় স্থানিয়দের কাছ থেকে। বাজারে এনে বিক্রি করতেও পরিবহনে খরচ পড়ে না। তাই কম দামে বিক্রি করতে পারি।

ক্রেতা কাজী টুটুল জানান, আগে মন চাইলেও একটা সবজি খাওয়া যেতো না। দাম বেশি থাকতো, সবজিও কেমন জানি দেখতে নিরস, নিরস মনে হতো। সিজন ছাড়া অনেক সবজি পাওয়াও যেতো না।

কৃষক আলী হোসেন জানান, আগে এককালিন শুধু ধানের চাষ করতাম এখন ধানের চাষের পর পানিতে ডুবে থাকা জমিতে মাচা করে লাউ-কুমড়া, কলমি ও অন্যান্য লতা জাতীয় সবজি করি। কচুরিপেনা দিয়ে লাল শাক, টমেটো ও অন্যান্য শাক-সবজিও করতে পারি। একবার মাচায় পূঁজি খাটালে আর খরচ হয় না। প্রথমবার পূঁজি বেশি মনে হলেও পরের বার থেকে ডাবল লাভের মুখ দেখি। তবে মাচা বাঁশের না করে নেট ও প্লাস্টিক পাইপের করতে পারলে আরো দীর্ঘ স্থায়ী ও টেকসই হয়। বর্ষা শেষ হলে মাচা উঠিয়ে বাঁজ করে রেখে দিয়ে ধানের চাষ করি। এতে সারা বছরই এখন চাষাবাদ করতে পারছি। লাভও ভালো হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও জিনদপুর ইউপির প্রশাসক কৃষিবিদ জাহাঙ্গীর আলম লিটন জানান, কৃষকদের মাঝে আমরা এখন যে আগ্রহ দেখছি তাতে আমরা খুবই উৎফুল্লিত। আমাদের কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে গিয়ে যে শ্রম দিচ্ছেন তাতে কৃষক ও দেশের মানুষের অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি ও খাদ্যের চাহিদাও মিটিয়ে সমৃদ্ধ হবে দেশ। আমাদের দেশ নদী মাতৃক একটি দেশ এখানে ঢালী পদ্ধতিতে চাষাবাদ খুবই উপযোগী একটি পদ্ধতি। কোন কৃষক এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ করলে উনাকে আর অন্য কাজ করতে হবে না। তিনি সারা বছর ফসল ফলিয়েই অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী হতে পারবেন।

আরও পড়ুন