দেশের ৩ হাজার ৯শ ৯৪ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মহাসড়কে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত হাইওয়ে পুলিশ। বিশেষ এ সেন্সরযুক্ত ক্যামেরায় যানবাহনের গতিবিধি পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি নির্দিষ্ট গতিসীমা ক্রস করা যানবাহনের নামে ভিডিও মামলা দেয়ার সুবিধা রয়েছে।
এছাড়া দেশের বিভিন্নস্থানে ৭২টি নতুন হাইওয়ে থানার প্রস্তাব করা হয়েছে। সেইসাথে জাতীয় মহাসড়কে ত্রি-হুইলার যানবাহন বন্ধে জোরালো অভিযানও চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়ার কথাও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
এ বিষয়ে হাইওয়ে পুলিশের প্রধান ও অতিরিক্ত আইজিপি মো. শাহাবুদ্দিন খান বলেন, মহাসড়কে শৃঙ্খলার আরও উন্নতি করতে আমরা বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। পুলিশ সদর দপ্তর আমাদের নানাভাবে সহায়তা করছে। সারা দেশের মহাসড়কগুলো সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হচ্ছে। ওই ক্যামেরার মাধ্যেমে সব যানবাহনের গতীবিধি পর্যবেক্ষন করা হবে। কোনো যানবাহন নির্দিষ্ট গতিসীমা না মানলে, তাৎক্ষনিক শনাক্ত করে ওই যানবাহনের নামে ভিডিও মামলা দেয়া হবে এবং তা কাগজপত্রে উল্লেখ থাকা ঠিকানায় পৌঁছে দেয়া হবে। সেখানে মামলার কারন উল্লেখ করা থাকবে। প্রয়োজনে অপরাধের ধরন যানবাহনের মালিক নিজেই তার মোবাইল ফোনে দেখতে পাবেন।
তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কে ক্যামেরা বসানোর কাজ প্রায় শেষ। ঢাকা-খুলনা মহাসড়কেও শিগগিরই ক্যামেরা বসবে আশা করছি। সড়কে যেসব যান আইন অমান্য করবে সহজেই তারা আইনের আওতায় আসবে।’ এ ছাড়া মহাসড়কে যান চলাচল আরও মসৃণ করতে নতুন করে ৭২টি থানার প্রস্তাব করা হয়েছে। আসা করা যাচ্ছে দ্রুতই তা অনুমোদন পাওয়া যাবে।
হাইওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, দেশে বর্তমান ৯৬টি জাতীয় মহাসড়কের পরিধি ৩ হাজার ৯৯৪ কিলোমিটার ও ১২৬টি আঞ্চলিক মহাসড়কের পরিধি ৪ হাজার ৮৮৩কিলোমিটার। এছাড়া জেলা সড়ক রয়েছে ১৩ হাজার ৫৯২ কিলোমিটার। এরমধ্যে সব থেকে বেশি দূর্ঘটনা ঘটে জাতীয় মহাসড়কে।
কারণ হিসাবে দেখা গেছে, নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও এই সড়কে অবাধে ত্রি-হুইলার যানবাহনের চলাচল, বেপরোয়া গতি ও ফিটনেস বিহীন যানবাহনের অবাধ বিচরণ। এ কারনে দেশের হাইওয়েগুলোতে নজরদারির ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে হাইওয়ে পুলিশ বেশ কিছু প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে, সব মহাসড়ক ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসানো। এই ক্যামেরায় ১ মাস পর্যন্ত ফুটেজ সংরক্ষনের ব্যবস্থা থাকবে।
একই সাথে বিষয়গুলো আরও তদারকির জন্য নতুন করে ৭২টি হাইওয়ে থানা স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এডিপির অর্থায়নে প্রস্তাবিত থানাগুলো হচ্ছে- কক্সাবাজারের মেরিন ড্রাইভ, সাবরাং, মহেশপুর, রাঙ্গামাটি সদর, কাপ্তাই, খাগড়াছড়ি, দীঘিনালা, বান্দরবানের চিম্বুক, নীলাচল, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ, চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ, রাজশাহীর গোদাগাড়ী, নওগাঁর মান্দা, পত্নীতলা, নওহাটা, বগুড়ার মহাস্থানগড়, শেরপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট, জয়পুরহাটের কালাই, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, রংপুরের কাউনিয়া, কুড়িগ্রামের নাগেরশ্বরী, লালমনিরহাটের সদর, দিনাজপুরের ফুলবাড়ী, দিনাজপুর সদর, ঘোড়াঘাট, ঠাকুরগাঁও সদর, নীলফামারীর জলঢাকা, ঢাকার কেরানীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জের কাঞ্চন, মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী, টাঈাইলের নাগরপুর, এলেঙ্গা, গাজীপুরের চন্দ্রা, নরসিংদীর ঘোড়াশাল, ময়মনসিংহের শম্ভুগঞ্জ, মুক্তাগাছা, জামালপুরের সরিষাবাড়ী, শেরপুরের গৌড়দ্বার, ফরিদপুরের মুন্সিবাজার, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া, ভাটিয়াপাড়া, শরীয়তপুরের জাজিরা, বাগেরহাটের মোল্লাহাট, খানজাহান আলী, মোংলা, সাতক্ষীরার সদর, ঝিনাইদহের আরাপপুর, নড়াইলের লোহাগড়া, কুষ্টিয়ার গড়াই, চুয়াডাঙ্গার সদর, দর্শনা, মেহেরপুর সদর, মাদারীপুরের মোস্তফাপুর, যশোরের খাজুরা, পিরোজপুর সদর, ঝালকাঠির গাবখান, দপদপিয়া, ভোলার বাংলাবাজার, চরফ্যাশন, পটুয়াখালীর পায়রা, লেবুখালী, কুয়াকাটা, বরগুনার আমতলী, কিশোরগঞ্জের মিঠামইন, সিলেটের চারখাই, ফেঞ্চুগঞ্জ, ভোলাগঞ্জ, হবিগঞ্জের মাধবপুর, মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সৈয়দাবাদ।
হাইওয়ে পুলিশ বর্তমানে ৩৬টি থানা ও ৩৭টি ফাঁড়ি নিয়ে সড়ক ও মহাসড়কে কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
জানা গেছে, প্রথমিক পর্যায়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বসানো সিসি ক্যামেরা কার্যক্রমকে টেস্ট হিসেবে নেয়া হয়েছে। এই মহাসড়কে সার্বক্ষণিক নজরদারি বাড়াতে ঢাকা, কুমিল্লা, ফেনী ও চট্টগ্রাম নামে চারটি জোন করা হয়েছে। এসব জোনের ২৫০ কিলোমিটারজুড়ে ১ হাজার ৪২৭টি সিসি ক্যামেরা বসানোর কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এসবের মধ্যে লং ভিশন পিটিজেড ডোম ক্যামেরা ১৬টি, পিটিজেড ডোম ক্যামেরা ৪৭১টি, বুলেট ক্যামেরা ৯২৪টি ও চেক পয়েন্ট ক্যামেরা ১৬টি। বিদুৎ চলে গেলে ব্যাকআপ পাওয়ার সিস্টেমসহ ৪৯০টি ক্যামেরার পোল রয়েছে।
পাশাপাশি ১টি সেন্ট্রাল কমান্ড কন্ট্রোল সেন্টার, ৫টি মনিটরিং সেন্টার, ৫ পেটাবাইটের ডেটা সেন্টার, ডেটা সেন্টারের মডিউলার সিস্টেম (এসিসহ), নেটওয়ার্ক সিস্টেম, ভিডিও ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, ভিপিও অ্যানালাইসিস সিস্টেম ও অটোমেটিক নম্বর প্লেট রিকগনিশন সিস্টেম রয়েছে। এইসুবিধাগুলো অন্য মহাসড়কগুলোর সিসি ক্যামেরায়ও রাখা হবে।