অদ্ভুত এক মাছ ‘সারপা সালপা’। রূপেরও কমতি নেই, রুপালি আঁশের ওপর সোনালি ডোরা। পানির মধ্যে যখন মাছটি সাঁতরে বেড়ায়, দেখে মনে হয় রুপার মুদ্রা ছড়িয়ে রয়েছে। ‘সালেমা পর্জি’ নামেও পরিচিত এ মাছ। এলএসডি (লাইসারজিক অ্যাসিড ডিথাইলামাইড) খেলে যেমন নেশা হয়, এই মাছ খেয়েও নাকি তা-ই হয়। এই মাছ খেলে নেশা থাকে প্রায় ৩৬ ঘণ্টা।
আফ্রিকা উপকূল সংলগ্ন আটলান্টিক মহাসাগর এবং ভূমধ্যসাগর এই মাছের বাসস্থান।
১৯৯৪ সালে প্রথম এই মাছের খবর পাওয়া যায়। এক ব্যক্তি সারপা সালপা খেয়েছিল। তারপর সেই ব্যক্তির অসম্ভব রকম হ্যালুসিনেশন দেখা দেয়। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয় যে, ওই ব্যক্তিকে হাসপাতালে পর্যন্ত ভর্তি করতে হয়েছিল। ৩৬ ঘণ্টা পর তিনি সুস্থ হয়েছিলেন।
প্রথম এই মাছ খেয়ে নেশার কয়েকটি ঘটনা ২০০৬ সালে একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল। ২০০২ সালে ফ্রেঞ্চ রিভিয়েরাতেই একই রকম আরেকটা ঘটনা ঘটে। সেন্ট ট্রোপেজে ওই মাছ কিনে গ্রিল করে খেয়েছিলেন ৯০ বছরের এক ব্যক্তি। মাছটি খাওয়ার পরেই ওই প্রবীণ নানা রকম শব্দ শুনতে থাকেন। কানে আসতে থাকে মানুষের চিৎকার, পাখির কলরব। টানা দু’দিন নানা রকম স্বপ্ন দেখেন তিনি।
কেন এই মাছ খেলে কারও কারও নেশা হয়- এ নিয়ে ২০১২ সালে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। সেখানে এই মাছের খাদ্যাভ্যাসকে দায়ী করা হয়। এই মাছ ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন জাতীয় অ্যালগি খায়। যা থাকে পসিডোনিয়া ওশিয়ানিয়া নামের সামুদ্রিক ঘাসে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এই অ্যালগির প্রভাবে সালেমা পর্জির শরীরে টক্সিন তৈরি হয়। তবে মাছটির শরীরে কী ধরনের টক্সিন তৈরি হয়, তা স্পষ্ট নয় বিজ্ঞানীদের কাছে। কেউ মনে করেন সালেমা পর্জির শরীরে ইন্ডোল গোষ্ঠীর ক্ষার থাকে। এলএসডির গঠনও এ রকমই।
অনেক বিজ্ঞানী মনে করেন সালেমা পর্জির শরীরে ডিমেথলাইট্রাইপথামিন (ডিএমটি) থাকে। এটি এক ধরনের মাদক জাতীয় পদার্থ, যা অনেক জীবেই থাকে। গবেষকদের মতে, এই ডিএমটির কারণে এই মাছ খেলে নেশা হতে পারে। তবে কী থেকে আসলে নেশা হয়, তা নিয়ে বিশেষ গবেষণা হয়নি।
আবার কয়েকজন বিজ্ঞানী জানান, এই মাছের মাথা না খেলে নেশা হয় না। মাথা ছাড়া মাছ মরিচ আর লেবু দিয়ে সেঁকে অনেকেই খেয়ে থাকেন। তবে কার কখন নেশা হতে পারে, তার উত্তর নেই। আবার অনেকেই মনে করেন, কোন সময় এই মাছ ধরা হয়েছে, তার উপর নির্ভর করে তা খেলে কতটা নেশা হবে।