
চট্টগ্রামের চান্দগাঁওয়ে র্যাব-৭ ব্যাটালিয়ন সদর দফতরে বৃহস্পতিবার (৮ মে) সকালে ওই দপ্তরের আবাসিক ভবনে নিজ কক্ষে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পলাশ সাহার মরদেহ। ঘটনাস্থলে তার পাশে একটি চিরকুট পাওয়া গেছে।
চিরকুটে পলাশ লিখেছেন, ‘আমার মৃত্যুর জন্য মা বা বউ কেউ দায়ী নয়। আমিই দায়ী। কাউকে ভালো রাখতে পারিনি। বউ যেন সব স্বর্ণ নিয়ে যায় এবং ভালো থাকে। মায়ের দায়িত্ব দুই ভাইয়ের ওপর। তারা যেন মাকে ভালো রাখে। স্বর্ণ বাদে যা কিছু আছে, তা মায়ের জন্য। দিদি যেন সবকিছু কো-অর্ডিনেট করে।’
এই মর্মান্তিক ঘটনায় পলাশের বড় ভাই নন্দ লাল সাহা বলেছেন, পলাশের স্ত্রী সুস্মিতা সাহা তাদের মা ও ভাইয়ের গায়ে হাত তুলেছিলেন। এই অপমান সহ্য করতে না পেরেই পলাশ আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন বলে তিনি মনে করেন।
নন্দ লাল সাহা জানান, দুই বছর আগে ফরিদপুরের চৌধুরীপাড়ায় পলাশের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই তাদের পরিবারে অশান্তি লেগেই থাকত। সুস্মিতা প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো বিষয় নিয়ে ঝামেলা করতেন। পলাশের মা আরতি সাহা তার সঙ্গে চট্টগ্রামে থাকতেন, যা সুস্মিতা মেনে নিতে পারতেন না। তিনি সবসময় পলাশকে তার মাকে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য চাপ দিতেন। কিন্তু পলাশ তার মা ও স্ত্রী দুজনকেই ভালোবাসতেন এবং কাউকেই দূরে সরিয়ে দিতে চাননি।
নন্দ লাল আরও বলেন, “বুধবার (৭ মে) সকালে সামান্য বিষয় নিয়ে আমার মা ও ভাইয়ের গায়ে হাত তোলে পলাশের স্ত্রী সুস্মিতা সাহা। এটা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেনি আমার ভাই। আর এ কারণেই আমার ভাই আত্মঘাতী হয়েছেন বলে আমাদের ধারণা।”
এদিকে, পলাশের অকালমৃত্যুতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রাক্তন ছাত্রের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন অভিনেতা জায়েদ খান। বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করা জায়েদ খান তার বিশ্ববিদ্যালয়ের জুনিয়রের মৃত্যুর খবরে ভেঙে পড়েছেন।
বুধবার রাতে পলাশ ও তার চিরকুটের দুটি ছবি পোস্ট করে জায়েদ খান লিখেছেন, ‘ছোট ভাই পলাশ। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের হওয়াতে দেখা হলে ভালো লাগত। খুব ভালো ছেলে ছিল। দেখা হলেই হাসি দিয়ে বলতেন ভাইয়া চা খাবেন?’
পারিবারিক কলহের কারণেই পলাশের এমন পরিণতি হয়েছে দাবি করে জায়েদ আরও লেখেন, ‘ছেলেটা (পলাশ) আজকে পারিবারিক কলহের কারণে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেল। মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে!’
জানা যায়, ৩৭ বছর বয়সী পলাশ সাহা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১০-২০১১ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র ছিলেন। তিনি ৩৭তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে যোগদান করেন। এর আগে তিনি সাব-রেজিস্ট্রার হিসেবে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে কর্মরত ছিলেন।