বুধবার ১৬ জুলাই, ২০২৫

ফেনীতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ভাঙ্গনে পানিবন্দী ৩০ গ্রাম, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন

ছবি: সংগৃহীত

টানা বৃষ্টিপাত এবং উজানের ঢলে ফেনীর মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া—এই তিন নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের অন্তত ১৭টি স্থানে ভাঙনের খবর পাওয়া গেছে। এর ফলে ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার অন্তত ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। উপজেলা দুটিতে বিদ্যুৎ না থাকায় বন্ধ রয়েছে ইন্টারনেট ও মোবাইল সংযোগও। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ।

বুধবার (৯ জুলাই) সরেজমিনে এই দুই উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ভয়াবহ চিত্র দেখা গেছে।

এদিকে, রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় জেলা শহরের সঙ্গে পরশুরাম উপজেলার যোগাযোগ সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকেই তাদের ঘরে পানি ঢুকতে শুরু করে। গত বছরের বন্যায়ও তাদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল, বছর ঘুরতেই আবারও একই দুর্ভোগে পড়েছেন তারা।

পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে, মুহুরী নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পরশুরাম উপজেলার জঙ্গলঘোনায় দুটি, অলকায় তিনটি এবং শালধর এলাকায় একটি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এছাড়া ফুলগাজী উপজেলার উত্তর শ্রীপুর এলাকায়ও মুহুরী নদীর বাঁধে একটি ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। সিলোনিয়া নদীর পরশুরামের গদানগর এলাকায় একটি ও ফুলগাজীর দেড়পড়া এলাকার দুটি স্থানে বাঁধ ভেঙেছে। কহুয়া নদীর পরশুরাম উপজেলার সাতকুচিয়ায় দুটি, বেড়াবাড়িয়ায় একটি এবং ফুলগাজী উপজেলার দৌলতপুর এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের একটি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে হাজার হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফুর রহমান জানিয়েছেন, তিনি মাঠপর্যায়ে সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। তিনি বলেন, বিভিন্ন পয়েন্টে ভাঙনের কারণে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে, তবে মানুষজন এখনও আশ্রয়কেন্দ্রে আসতে শুরু করেনি।

ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাহরিয়া ইসলাম বলেছেন, তাদের উপজেলায় তিনটি নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের চারটি স্থানে ভাঙনের তথ্য পাওয়া গেছে। এরই মধ্যে শতাধিক মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছেন এবং তাদের জন্য শুকনো খাবার ও রান্না করা খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া, বুধবার উপজেলার উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে চলমান অর্ধ-বার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।

ফেনী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান জানান, জেলায় টানা দুদিন ধরে মাঝারি ও ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৪৪১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা বিগত কয়েক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। বুধ ও বৃহস্পতিবারও জেলাজুড়ে মাঝারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আবুল কাশেম জানিয়েছেন, নদীর পানি এখনও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে এবং উজানে বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে আরও বাঁধ ভাঙনের আশঙ্কা রয়েছে। ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তার হোসেন মজুমদার বলেন, মুহুরী ও সিলোনিয়া নদীর বেড়িবাঁধের ৬টি স্থান ভেঙে গেছে। এর মধ্যে মুহুরী নদীর ফুলগাজী অংশে দুটি ও সিলোনিয়া নদীর পরশুরাম অংশে চারটি। ভাঙন রোধে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে বলে তিনি জানান।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে ফুলগাজী, পরশুরাম ও সদর উপজেলায় ১৫৩টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। দুর্গতদের জন্য ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ৪০০ প্যাকেট শুকনো খাবার এবং ১২০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

ফুলগাজীতে ৯৯টি, পরশুরামে ৩২টি এবং সদরে ২২টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। মঙ্গলবার (৮ জুলাই) রাতে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ইসমাইল হোসেনকে প্রধান করে ১১ সদস্যবিশিষ্ট একটি মনিটরিং টিম ও একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। সরকারি দপ্তর ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর গুরুত্বপূর্ণ নথি, কম্পিউটারসহ ইলেকট্রনিকস সামগ্রী নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।

এছাড়াও, প্রশাসন ২ হাজার ৫৪৭ জন স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রেখেছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে ৪৮টি পরিবারের ১৩৩ জন আশ্রয় নিয়েছেন এবং তাদের মধ্যে রান্না করা ও শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম ও পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান মঙ্গলবার রাতেই ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার বন্যা দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।

আরও পড়ুন