
সরকারি চাকরি পেতে ১১ বছর আগে ১১ লাখ টাকা দিয়ে প্রতারিত হন নজরুল ইসলাম (২৯)। এরপর ২০১৩ সালে নৈশপ্রহরী এবং ২০১৭ সালে উচ্চমান সহকারি হিসেবে চাকরি নিতে গিয়েও প্রতারিত হন। প্রতারিত হয়ে লাখ লাখ টাকা খুইয়ে নিজেই শুধু করেন প্রতারণা। ভুয়া কাস্টমস অফিসার পরিচয়ে খুলে বসেন প্রতারকদের এক বিশাল চক্র। হাতিয়ে নিয়েছেন ৪ থেকে ৫ কোটি টাকা। নজরুলসহ তাঁর কয়েকজন সহযোগীকে গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে এসব তথ্য জানিয়েছে র্যাব।
প্রতারক নজরুল ইসলামসহ তার আরও তিন সহযোগীকে আটকের পরদিন র্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান। বুধবার (১৬ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
এর আগে মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) দিনগত রাতে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় অভিযান চা লিয়ে নজরুল ইসলাম (২৯) ও তার তিন সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-১০)। গ্রেপ্তার তিন সহযোগী হলেন, ওয়ায়েশ করোনী ওরফে সেলিম (৪৭), নাসির উদ্দিন (২৬) ও সৈয়দ মো. এনায়েত (৪৮)। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ১টি প্রাইভেট কার, ২টি মোটরসাইকেল ও বিপুল পরিমাণ সরঞ্জামাদি জব্দ করা হয়।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের সফি মিয়ার ছেলে নজরুল ইসলাম। তিনি স্থানীয় একটি কলেজ থেকে ডিগ্রি পাস করে কাস্টমসে চাকরির জন্য আবেদন করেছিলেন। চাকরির জন্য বিভিন্ন সময়ে প্রতারকদের টাকা দিয়ে প্রতারিত হন।
তিনি জানান, প্রথমে ২০১২ সালে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে চাকরি পেতে এক প্রতারককে ১১ লাখ টাকা দিলেও চাকরি পাননি। প্রতারকদের মাধ্যমে ২০১৩ সালে নৈশ প্রহরী ও ২০১৭ সালে উচ্চমান সহকারী হিসেবে চাকরি পাওয়ার আশায় পুনরায় আবেদন করে প্রতারিত হয়। কাস্টমসে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সময় বিভিন্ন কর্মকর্তার সান্নিধ্যে আসার সুবাদে তিনি এই সংস্থার কার্যক্রম সম্পর্কে ভালো ধারণা লাভ করেন।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, এরপর নিজেই সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে অর্থ আত্মসাতের লোভে একটি প্রতারক চক্র গড়ে তোলেন নজরুল। প্রতারণা করার জন্য তিনি নিজেকে এলাকায় ঊর্ধ্বতন কাস্টমস অফিসার হিসেবে পরিচয় দিতেন। এক সময় তাঁর মাধ্যমে কাস্টমসের পিয়ন, ঝাড়ুদার ও অন্যান্য পদে অস্থায়ী ভিত্তিতে ৪-৫ জন চাকরি পান। তবে তাঁদের চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে নজরুলের কোনো হাত ছিল না। ওই চাকরি পাওয়া ব্যক্তিরা এলাকায় প্রচার করেন যে তাঁরা নজরুলের মাধ্যমে চাকরি পেয়েছেন। এভাবে তিনি বিশ্বস্ততা অর্জন করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। চক্রটি গত ২ বছরে ভুয়া পরিচয়ে প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেন প্রায় ৪-৫ কোটি টাকা।
তিনি আরও বলেন, বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরে দেশের বাইরে থেকে আসা স্বর্ণ ও মালামাল আটকে গেলে অর্থের বিনিময়ে ছাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলেও টাকা হাতিয়ে নিতেন প্রতারক নজরুল। প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎকৃত অর্থ দিয়ে তিনি ফ্ল্যাট বুকিং, জমি ক্রয়, বাড়ি ও বিভিন্নভাবে তার নামে অর্থ সম্পদ গড়েন। প্রতারক নজরুল চক্র প্রায় দেড় কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নিয়েছেন এমন ১৭ জন ভুক্তভোগীর তথ্য পেয়েছে র্যাব। অন্যান্য ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে আরও প্রায় ৪-৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি।