এপ্রিল ২০, ২০২৫

রবিবার ২০ এপ্রিল, ২০২৫

পরীক্ষার প্রথম দিনেই পিতৃহারা, কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের আর্থিক সহায়তা পেল সেই নাহিদ

Nahid, who lost her father on the first day of her exams, received financial assistance from the Comilla District Commissioner.

চলমান মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষার প্রথম দিনেই বাবাকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছিল কুমিল্লার লালমাই উপজেলার নাহিদ। পরীক্ষার হল থেকে বের হয়ে সরাসরি বাবার কফিন কাঁধে তোলার মর্মান্তিক দৃশ্য নাড়া দিয়েছে সমাজের বিবেকবান মানুষদের। এই হৃদয়বিদারক ঘটনা জানতে পেরে তাৎক্ষণিকভাবে নাহিদের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়ছার।

রাইজিং কুমিল্লাসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দৃষ্টিগোচর হওয়ার পরপরই জেলা প্রশাসক নাহিদের অস্বচ্ছল পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান এবং অন্যান্য সরকারি সুযোগ-সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন।

শুক্রবার (১১ এপ্রিল) সকালে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে লালমাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) হিমাদ্রী খীসা পেরুল উত্তর ইউনিয়নের বড় হাড়গিলা গ্রামে নাহিদের বাড়িতে যান। সেখানে তিনি শোকাহত পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দেন এবং নাহিদের মায়ের হাতে নগদ ২০ হাজার টাকা তুলে দেন। একইসঙ্গে, ইউএনও নাহিদের হাতে তার পরীক্ষার প্রয়োজনীয় উপকরণও তুলে দেন।

এ সময় হরিশ্চর ইউনিয়ন হাই স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ ও এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্রসচিব ইলিয়াছ কাঞ্চন এবং মাতাইনকোট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, গত বুধবার দিবাগত রাত দেড়টায় নাহিদের বাবা আক্তার হোসেন (৪৫) কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। বৃহস্পতিবার সকালে বাবার দাফন হওয়ার কথা থাকলেও ছেলে নাহিদের এসএসসি পরীক্ষা থাকায় তা পিছিয়ে দুপুর ২টায় নির্ধারণ করা হয়। পরীক্ষা শেষ করে নাহিদ সরাসরি পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরে বাবার লাশের খাটিয়া কাঁধে তুলে নেন এবং জানাজা ও দাফন সম্পন্ন করেন।

নাহিদ স্থানীয় মাতাইনকোট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে।

বাবা হারানো এসএসসি পরীক্ষার্থী নাহিদ জানায়, তার বাবা গত চার মাস ধরে টিবি রোগে ভুগছিলেন। ধার-দেনা করে বিভিন্ন হাসপাতালে বাবার চিকিৎসা করানোর চেষ্টা করেছেন তারা। গত মঙ্গলবার বিকেলে বাবার নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বের হলে দ্রুত কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

নাহিদ আরও জানায়, বুধবার সকাল থেকে সে বাড়িতে বসেই এসএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। কিন্তু রাত দেড়টায় বাবার মৃত্যুর খবর আসে। বৃহস্পতিবার সকালে বাবার নিথর দেহ উঠোনে রেখে একাই পরীক্ষা দিতে গিয়েছিল সে। পরীক্ষার হলে বসেও শুধু বাবার কথাই মনে পড়ছিল তার।

নাহিদ আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলে, একদিকে জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা, অন্যদিকে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারানোর বেদনা – গত ১০ এপ্রিল তার জীবনে এক গভীর ট্রাজেডি হয়ে এসেছে। তবে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক স্যার ও লালমাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার ম্যাডামের নগদ আর্থিক সহায়তা ও তাদের পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাসে সে কিছুটা হলেও ভরসা খুঁজে পেয়েছে। সে জানায়, স্যারদের প্রতি সে কৃতজ্ঞ এবং বাকি পরীক্ষাগুলো যাতে সুষ্ঠুভাবে দিতে পারে তার জন্য সকলের কাছে দোয়া চেয়েছে।

লালমাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হিমাদ্রী খীসা জানান, বৃহস্পতিবার তিনি উপজেলার বিভিন্ন পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শন করছিলেন, তবে কেউই পরীক্ষার্থী নাহিদের বাবার মৃত্যুর বিষয়টি তাকে জানায়নি। রাতে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখে তিনি বিষয়টি জানতে পারেন। প্রতিবেদনটি জেলা প্রশাসক স্যারের নজরেও আসে। তাৎক্ষণিকভাবে জেলা প্রশাসক স্যারের নির্দেশে শুক্রবার সকালে তিনি নাহিদের বাড়িতে যান এবং নগদ ২০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা ও পরীক্ষার সরঞ্জামাদি তুলে দেন।

ইউএনও হিমাদ্রী খীসা ভবিষ্যতে নাহিদের পরিবারকে বিভিন্ন সরকারি সুযোগ-সুবিধার আওতায় আনার আশ্বাসও দেন।