জুলাই ২৭, ২০২৪

শনিবার ২৭ জুলাই, ২০২৪

নিজের কবর নিজেই তৈরী করে দেখভালও করছেন এক বৃদ্ধ, ইচ্ছে মাজার বানানো

An old man is taking care of his own grave, he wants to make a shrine
ছবি: সংগৃহীত

একজন মানুষ মারা যাওয়ার ইসলামের বিধান মোতাবেক পর তার স্বজনেরা সাধারণত দাফন করে থাকেন। যদি কোন ওছিহত থাকে তা রক্ষা করে স্বাভাবিকভাবে মৃত ব্যক্তিকে কবরস্থ করা হয়। কিন্তু ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটালেন নোয়াখালীর এক বৃদ্ধ।

জানা গেছে, জীবিত অবস্থায় নিজের জন্য নিজেই পাকা কবর তৈরী করেন নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার হানিফ (৮০) নামের এক বৃদ্ধ।

এদিকে, বিষয়টি জানা জানি হলে এলাকায় চাঞ্চল্যর সৃষ্টি হয়।

সরোজমিন গিয়ে দেখা গেছে, বাড়ীর মধ্যে বিশাল পাকা ঘর। ঘরের ডান পাশে খনন করে মাটির তলদেশ থেকে ইটের গাথনি দিয়ে কবরের আকৃতি করে তৈরী করা হচ্ছে বিশাল প্রাচীর। রাজ মিস্ত্রিরা একনিষ্ঠ মনে কবর নির্মাণের কাজ করে যাচ্ছেন। পাশে চেয়ারে বসে নিজের কবরের কাজ দেখভাল করছেন আশি বছরের বৃদ্ধ হানিফ। রোগাক্রান্ত ও শারীরিক জরাগ্রস্ত হওয়ায় মৃত্যু চিন্তা ভর করে তাকে।

নিজের জন্য পাকা কবর তৈরি করা ওই ব্যক্তি স্থানীয় ভাবে জমিদার ডাক্তার নামে পরিচিত। বুড়িরচর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের জোড়খালী গ্রামের মৃত মোজাফফর আহমদের ছেলে। ব্যক্তি জীবনে ৪ ছেলে ও ৫ মেয়ের সন্তনের জনক তিনি।

জানা গেছে, মো: হানিফ চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর চরণদ্বীপ দরবার শরীফের মাওঃ খাইরুল বাশার ফারুকীর একজন খলিফা। মাইজভান্ডার দরবার শরীফে তিনি ৫৫ বছরেরও অধিক সময় এ তরীকার সাথে জড়িত। পীরের নির্দেশে প্রতি বছর আরবী রবিউস সানি চন্দ্র মাসের ১১ তারিখে পারিবারিক ভাবে নিজ বাড়িতে ওরস মাহফিল করে আসছেন।

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তার প্রায় ত্রিশ হাজার মুরিদ রয়েছে। বর্তমানে তার বয়স আশি বছর। পীরের নির্দেশে নাকি তিনি এমন কাজ করছেন।

নিজের কবর নিজেই তৈরি করার বিষয়ে মো: হানিফ গণমাধ্যমকে বলেন, আমার ওসিয়ত করা জায়গায় হয়ত আমার ছেলেরা পরবর্তীতে কবর নাও দিতে পারে। তাই আমার ক্রয়কৃত নিজস্ব জায়গায় আমি আমার কবর তৈরী করছি। আমি এখানেই থাকবো। মৃত্যুর পরে এ কবরকে কেন্দ্র করে আমার ভক্তরা মাজার তৈরী করে তা জিয়ারত করবে।

ঘরের পাশে কবর স্থাপন ও পাকাকরণ বিষয়ে পরিবারের কোন সদস্যের দ্বিমত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যেহেতু আমি পীরের নির্দেশনা পেয়ে নিজের কবর নিজে তৈরী করছি তাতে কারো কোন আপত্তি নাই।

এ বিষয়ে ডাক্তার হানিফের ছেলে শাহাবুদ্দিন গণমাধ্যমকে জানান, আমার বাবা দীর্ঘদিন মাইজভান্ডার তরিকায় হাজার হাজার মুরিদ সৃষ্টি করেছেন। আমাদের এ বাড়ীতে প্রতিবছর তিনি মুরিদদের নিয়ে ওরশ মাহফিল করে আসছেন। যার খরচ সম্পূর্ণ আমাদের পারিবারিক সদস্যরা বহন করেন। যেহেতু তিনি রোগশয্যায় যেকোন সময় মৃত্যুবরণ করতে পারেন। উনার মনের ইচ্ছাতেই উনি নিজের কবরটা যেন দেখে যেতে পারেন। সেই লক্ষ্যেই আমরা ছেলেরা বাবার সামনে কবরটা তৈরি করছি।

এ বিষয়ে ছোট ছেলে মো. শাহারাজ উদ্দিন ঘরের পাশে বাবার জন্য কবর তৈরী প্রসঙ্গে বলেন, বাবার মৃত্যুর পর উনার ইচ্ছায় তাকে এখানে দাফন দেয়া হবে। তবে বাবার কবরকে মাজার বানিয়ে কোন প্রকার ব্যবসা করার ইচ্ছা আমাদের পরিবারের কারোও নেই।

এ বিষয়ে স্থানীয় প্রতিবেশী জাফর উদ্দিন গণমাধ্যমকে জানান, মৃত্যুর আগে কারো জন্য কখনও কবর বানাতে দেখিনি কিংবা শুনিনি। কিন্তু এখানে দেখলাম। নিজের জন্য নিজেই কবর তৈরি করেছেন জমিদার ডাক্তার। এতে এলাকায় কেহবা ভাল বললেও অনেকেই আবার খারাপ মন্তব্য করতে দেখা যায়। তবে অদৃশ্য কোন এক ভয়ে প্রকাশ্যে কেউ কিছু বলতে পারছে না।

এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি মেম্বার লিটন চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, এ ব্যক্তি ভিন্ন তরীকার লোক, যে কারণে তিনি তার মত করে এ কবর তৈরি করেছেন। ইসলামী শরিয়তে কি বলে তা আমার জানা নেই। তবে তার জীবনের শেষ ইচ্ছে মোতাবেক কবরটি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে হাজী এমরাত আলী জামে মসজিদের খতিব মাওলানা মাহমুদুল হাসান বলেন, মৃত্যুর আগে কবরের জন্য স্থান নির্ধারণ করা এবং মাটি ভরাট করা যেতে পারে। কিন্তু মৃত্যুর আগে বা পরে কবর বাঁধাই করা ইসলাম সমর্থন করে না। এছাড়াও যদি কোন অসৎ বা মাজার করার উদ্যেশ্য থাকে তাহলে এলাকাবাসীর উচিৎ এটি প্রতিহত করা।

এ বিষয়ে বুড়িরচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, মুত্যুর আগেই জীবিত মানুষের জন্য কবর খুড়া হয়েছে এমন খবর পেয়ে ওই ব্যক্তির ছেলেদেরকে জিজ্ঞাসা করলাম যে এটা কেন করেছ।

ছেলেদের উত্তর ছিল আমার বাবার একান্ত ইচ্ছা যেন উনি উনার কবরটা দেখে যেতে পারে। আমি তাদেরকে বলেছি ইসলামের বিধি বিধানের বাইরে এসকল কাজ করা যাবেনা। আসলে এগুলোর কোন বিধান নেই। এসকল গর্হিত কাজ এখনই বন্ধ করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছি।