
পুষ্টি চাহিদা পূরণ এবং খাদ্য নিরাপত্তায় বাংলাদেশে ডিম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, দেশে গত এক দশকে ডিমের উৎপাদন দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। সবশেষ ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশে দুই হাজার ৪৪০ কোটি পিসেরও বেশি ডিম উৎপাদন হয়েছে, যা দশ বছর আগে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ছিল মাত্র এক হাজার ১৯১ কোটি পিস। বর্তমানে দেশে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৪ কোটি পিস ডিম উৎপাদন হচ্ছে।
উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দেশে ডিমের চাহিদাও বেড়েছে। বহু ধরনের খাদ্যপণ্যে ডিমের ব্যবহার বাড়ায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এসে ডিমের বাজার প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে। মাত্র পাঁচ বছর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে এই বাজার ছিল প্রায় সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকার।
ডিমের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং দাম সহনীয় হওয়ায় প্রতিটি পরিবারেই ডিম খাওয়ার বিষয়ে বাড়তি সচেতনতা তৈরি হয়েছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) মতে, সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রতিটি মানুষের বছরে ন্যূনতম ১০৪টি ডিম খাওয়া প্রয়োজন। সেই নিরিখে, বাংলাদেশ প্রণিসম্পদ অধিদপ্তর জানাচ্ছে, বর্তমানে দেশে মাথাপিছু গড়ে ১৩৭টি ডিমের সহজলভ্যতা রয়েছে।
বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, ২০৩১ সাল নাগাদ ডিমের মাথাপিছু ভোগ ১৬৫টি এবং ২০৪১ সাল নাগাদ তা ২০৮টিতে উন্নীত করা হবে।
দেশের পোল্ট্রি খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই অভাবনীয় প্রবৃদ্ধির পেছনে ছোট-বড় উদ্যোক্তাদের বড় অবদান রয়েছে। নানান প্রতিকূল পরিবেশেও তারা এ ব্যবসায় টিকে রয়েছেন এবং ডিমের সরবরাহ ব্যবস্থাকে একটি স্থিতিশীলতার বলয়ে রেখেছেন।
উল্লেখ্য, দেশের ৮৮ থেকে ৯০ শতাংশ ডিম আসে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক খামার থেকে। বিপিআইসিসির হিসাব মতে, বর্তমানে প্রতি পিস ডিমের উৎপাদন খরচ প্রায় ১০.৫০ টাকা।
এ পরিস্থিতির মধ্যেই প্রতি বছরের মতো এবারও বাংলাদেশে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে ‘বিশ্ব ডিম দিবস’। ১৯৯৬ সালে অনুষ্ঠিত আই.ই.সি ভিয়েনা কনফারেন্স থেকে এই দিবসটি পালন করা হচ্ছে। বিশ্বজুড়ে অক্টোবরের দ্বিতীয় শুক্রবারে এই দিবসটি পালিত হয়।
দেশের পোল্ট্রি খাতের বৃহৎ উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিপিআইসিসি এবং ওয়াপসা- বাংলাদেশ শাখার যৌথ আয়োজনে আজ (অক্টোবরের দ্বিতীয় শুক্রবারে) বিশ্ব ডিম দিবস-২০২৫ পালন করা হবে। দিবসটি ঘিরে বিশ্বব্যাপী চলছে ইতিবাচক ক্যাম্পেইন, যার মধ্য দিয়ে বিশ্বের মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণে ডিমের প্রয়োজনীয়তার বার্তা সবার কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডিমকে বলা হয়ে থাকে পরিপূর্ণ খাদ্য বা সুপার ফুড। সারা পৃথিবীতে মাত্র কয়েকটি খাদ্যকে সুপার ফুড হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়- যার মধ্যে ডিম অন্যতম। ভিটামিন ও মিনারেলে সমৃদ্ধ এমন একটি প্রাকৃতিক আদর্শ খাবার পৃথিবীতে খুব কমই আছে। বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন ধরনের ভ্যালু-অ্যাডেড ডিম পাওয়া যাচ্ছে, যেমন: ওমেগা-থ্রি ডিম, কিডস এড, সেলেনিয়াম সমৃদ্ধ ডিম, ফোলেট এগ ইত্যাদি।