ডিসেম্বর ১৩, ২০২৪

শুক্রবার ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪

ট্রেনের টিটিই কর্তৃক ববি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের হেনস্তা, শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ

Rising Cumilla - Bobby Teacher-Student Harassment by Train TTE-Student Protest
ছবি: প্রতিনিধি

“জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস” ট্রেনের টিটিই মোশাররফ আলি কর্তৃক ববি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের হেনস্তা ও সমন্বয়ক ট্যাগ দিয়ে সংবাদ করার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছেন শিক্ষার্থীরা।

আজ বুধবার (২০ নভেম্বর) বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) গ্রাউন্ড ফ্লোরে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলন করে হেনস্তাকারী টিটিই মোশাররফ আলিকে চাকরি থেকে অব্যাহতি ও যথাযথ বিচারের দাবি তোলেন।

শিক্ষার্থীদের পক্ষে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের মোসাহিদ আনসারি বলেন, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহকারী অধ্যাপক জনাব মো. ইমরান হোসেন এবং বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের শিক্ষাসফর কালে সিলেটের কুলাউড়া স্টেশনে “জয়ন্তিকা এক্সপ্রেসের” টিটিই কর্তৃক হয়রানির ঘটনাকে বিকৃত করে কতিপয় গণমাধ্যম আমাদেরকে সমন্বয়ক ট্যাগ দিয়ে মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও মানহানিকরভাবে সংবাদ প্রকাশ করে। যা আমাদের শিক্ষক, সহকারী অধ্যাপক মো. ইমরান হোসেন ও তার সাথে উপস্থিত ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ১৬ জন শিক্ষার্থীকে ব্যক্তিগত ও সামাজিক দিক দিয়ে চরমভাবে হেয় প্রতিপন্ন করেছে। প্রকৃতপক্ষে, আমরা কখনোই নিজেদের সমন্বয়ক দাবি করিনি,বরং আমরা নিজেদের বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও স্যার শিক্ষক পরিচয় দিয়েছেন।

উক্ত ঘটনাসমূহের প্রতিবাদে আজকে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলনের আহ্বান করেছি। আপনাদের সামনে আমরা প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরছি এবং আমাদের দাবিগুলো জানাচ্ছি।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ৩য় বর্ষের ২য় সেমিস্টারে “ফটো জার্নালিজম ” কোর্সের অংশ হিসেবে ছবি তোলার কলাকৌশল শেখানোর জন্য প্রতিবছর স্টাডি ট্যুরে যাওয়া হয়। তারই ধারাবাহিকতায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অবগত করে , গত ১৪ নভেম্বর কোর্সটির পাঠ দানকারী শিক্ষক জনাব ইমরান হোসেনসহ ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ১৬জন শিক্ষার্থী সিলেটে যায়।

১৬ নভেম্বর সিলেট থেকে শ্রীমঙ্গলে বাসে যাওয়ার প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু আমাদের মাঝে অনেকের ট্রেন ভ্রমণের অভিজ্ঞতা ছিল না। তাই শিক্ষার্থীরা ১৫ নভেম্বর রাতে স্যারের কাছে সিলেট থেকে শ্রীমঙ্গলে ট্রেনে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করি।ট্রেনের টিকিট না পাওয়ায়, স্যার শুরুতে অসম্মতি জানান। পরে শিক্ষার্থীদের জোরালো অনুরোধে স্যার স্টান্ডিং টিকিট নিয়ে ট্রেনে যেতে সম্মতি জানান।

১৬ নভেম্বর স্টেশনে গিয়ে মাত্র ৫টি স্টান্ডিং টিকেট পাওয়ায় “জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ” ট্রেনের এক টিটিইকে সমস্যার কথা জানালে তিনি ট্রেনটির ‘জ’ বগিতে গিয়ে বসার পরামর্শ দেন এবং স্বাভাবিক ভাড়া দিয়েই যেতে পারবো বলে আস্বস্ত করেন। (উল্লেখ্য যে,সিলেট থেকে শ্রীমঙ্গল যেতে মাত্র ২ঘণ্টা সময় লাগে)

ট্রেনে উঠার কিছুক্ষণ পর ট্রেনের অন্য বগির দায়িত্বপ্রাপ্ত এক টিটিই নিয়ম বহির্ভূতভাবে ১০০ টাকা করে মোট ১৭০০ টাকা দাবি করেন। নিয়ম বহির্ভূতভাবে তাকে তাৎক্ষণিকভাবে টাকা দিতে রাজি হননি স্যার।

পরে টিকেট পরীক্ষক( টিটিই) মোশারফ আলী টিকেট চেক করতে আসেন। স্যার তখন পরিচয় দিয়ে সমস্যার কথা বলেন এবং নিয়মিত ভাড়া ১১০টাকা রাখার অনুরোধ জানান । কিন্তু নিয়ম বহির্ভূতভাবে এর আগে টাকা না দেয়ায় তিনি ক্ষিপ্ত হন এবং বলেন, “আপনারা টিকিট কাটেননি, আপনাদের কাছে আমার লোক ১০০ টাকা করে চেয়েছে, সেটাও দেননি। এখন আপনাদের সবাইকে টিকেট ভাড়াসহ জরিমানা দিতে হবে।” স্যার বলেন,আমরা টিকিট ছাড়া তাকে অবৈধভাবে কেন টাকা দেব? তখন টিটিই অনুমতি ছাড়া তার আইফোন বের করে ভিডিও ধারণ করতে শুরু করেন এবং বলতে থাকেন এই যে দেখতে পাচ্ছেন এরা ট্রেনে টিকেট ছাড়া উঠেছে, জরিমানাও দিচ্ছে না। স্যার তখন নিজের পরিচয়পত্র দেন এবং তাকে অনুমতি ছাড়া এভাবে হয়রানিমূলকভাবে ভিডিও ধারণ না করার অনুরোধ জানান।

কিন্তু টিটিই মোশাররফ আলী স্যারের কার্ড নিচে ছুড়ে ফেলে দেন এবং রাগান্বিত হন। টিটিইর তার নির্ধারিত পোশাক পরিধান না করায় স্যার তার পরিচয় জানতে চান কিন্তু তিনি তার পরিচয়পত্র না দিয়ে উগ্র আচরণ করতে শুরু করেন। স্যারের সাথে এই ঘটনা দেখে আমরা সামনে এগিয়ে যাই এবং টিটিইকে শিক্ষকের সাথে অসাদাচরণ না করার অনুরোধ জানায়। কিন্তু তিনি আমাদের অনুরোধ না, রেখে আমাদের সাথেও উল্টো -পাল্টা কথা বলতে শুরু করেন ও আমাদের বিভিন্ন হুমকি দেন।

এই ঘটনা দেখে টিটিই মোশাররফ আলির সাথে থাকা রেলওয়ে পুলিশ ও ট্রেনে কর্মরত অন্যান্য কর্মকর্তারা টিটিইকে( মোশাররফ) টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যান এবং তার পক্ষ থেকে স্যার ও আমাদের সকলের কাছে ক্ষমা চান।

এর আগে আমাদের অবস্থানরত “জ” বগিতে সিলেট থেকে কুলাউড়াগামী এক যাত্রীর সাথে তর্ক করে ৬০টাকার ভাড়া ১২০ টাকা নিয়েছেন টিটিই মোশাররফ আলি, যদিও আইন অনুযায়ী তিনি জরিমানাসহ সর্বোচ্চ ৯০ টাকা আদায় করতে পারেন।সেই ঘটনার তথ্যপ্রমাণ আমাদের কাছে রয়েছে।

টিটিই এর বাড়ি কুলাউড়াতে হওয়ায় কিছুক্ষণ পর কুলাউড়া স্টেশনে ট্রেন থামলে টিটিই স্থানীয় কিছু লোকজন, সাংবাদিক এবং কুলাউড়া স্টেশন মাস্টারকে নিয়ে হাজির হয়। তারা ট্রেন আটকে রাখেন এবং টিটিই মোশাররফ আলির ইন্ধনে ট্রেনে কিছু স্থানীয় লোকজন আমাদের সাথে চরমভাবে অসদাচরণ করে এবং বিভিন্নভাবে হুমকি দেয়। পরিস্থিতি বুঝতে পেরে স্যার আমাদেরকে ট্রেনে থাকার পরামর্শ দেন এবং নিজে ট্রেন থেকে নেমে স্টেশন মাস্টারসহ উপস্থিত সকলকে বিষয়টি বুঝিয়ে বলেন।

স্টেশন মাস্টারসহ উপস্থিত সকলে বিষয়টি বুঝতে পেরে টিটিই মোশাররফ আলির হয়ে দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চান। তখন আমাদের সকলের ভাড়া দিতে চাইলে স্টেশন মাস্টার স্যারকে ৮জনের ভাড়া দেওয়ার অনুরোধ করেন।

তিনি আরও বলেন, শ্রীমঙ্গল পৌঁছে ট্রেন থেকে নামলে স্টেশন মাস্টার পুনরায় টিটিই’র ভুল স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করেন। আমাদের কোন শক্ত পদক্ষেপ না নিতে অনুরোধ করেন স্টেশন মাস্টার।স্টেশন মাস্টারসহ অন্যান্যরা দুঃখপ্রকাশ করায় স্যার ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখে বিষয়টি সেখানেই সমাধান করেন। উপরে উল্লিখিত ঘটনাটি গুটিকয়েক গণমাধ্যমের অনলাইন ভার্সনে স্যার ও শিক্ষার্থীদেরকে জড়িয়ে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও মানহানিকর সংবাদ প্রকাশ করেছে। যাতে সহকারী অধ্যাপক জনাব মো. ইমরান হোসেন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ১৬ জন শিক্ষার্থী ব্যক্তিগত ও সামাজিকভাবে চরম হেয় প্রতিপন্ন হয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা হেনস্তাকারী,যাত্রীদের থেকে অতিরিক্ত অর্থ গ্রহণকারীও অনৈতিক প্রস্তাবকারী টিটিই মোশাররফ আলির শাস্তি ও ট্রেনের সকল ধরনের দুর্নীতিবাজদের বিচারের দাবি করেন। ক্ষমতার অপব্যবহার করে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের হেনস্তা করা ও অবৈধভাবে টিকিট না দিয়ে টাকা নেওয়ার অপরাধে টিটিই মোশাররফ আলিকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়াসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

তারা আরও উল্লেখ করেন,ওই টিটিই এর অপরাধের বিষয়ে আমরা রেল মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানাতে পারি সেই ভয়ে ডিফেন্স নেওয়ার জন্য তিনি এই ধরনের মিথ্যা ও বানোয়াট নিউজ করিয়েছেন।