
কিছুদিন আগেও “রোবট মানুষের জায়গা নেবে”—এমন কথা শুনলে মানুষ হেসে উড়িয়ে দিত। কিন্তু এখন ব্যাপারটা কৌতুক নয়, বাস্তব। চ্যাটজিপিটি লিখে ফেলছে প্রবন্ধ, ডিজাইন করছে ছবি, এমনকি কোডও। ব্যাঙ্কের কাস্টমার সার্ভিসে রোবট, দোকানে সেলফ-চেকআউট মেশিন—এই দৃশ্যগুলো এখন নতুন নয়।
তাহলে সত্যিই কি আমরা চাকরি হারাতে যাচ্ছি? আর যদি তাই হয়, তাহলে কোথায় দাঁড়াবে মানুষ?
AI কী, আর এত দক্ষ কীভাবে হলো?
AI বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এমন এক প্রযুক্তি, যা মানুষ ছাড়া নিজেই চিন্তা করতে শেখে, সিদ্ধান্ত নেয়। মেশিন লার্নিং, ডিপ লার্নিং—এসব প্রযুক্তির মাধ্যমে AI লাখ লাখ তথ্য বিশ্লেষণ করে এক ধরনের ‘বুদ্ধি’ তৈরি করে।
যেমন, AI যদি হাজারটা ইংরেজি প্রবন্ধ পড়ে, সে বুঝে ফেলে কীভাবে প্রবন্ধ লেখা হয়। এরপর তুমি শুধু টপিক বললেই সে নিজে থেকেই লিখে ফেলবে—তাও নির্ভুল ভাষায়।
কোন কোন চাকরি সবচেয়ে ঝুঁকিতে?
AI আসার ফলে কিছু নির্দিষ্ট ধরনের চাকরির উপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে:
ডাটা এন্ট্রি, কাস্টমার সার্ভিস: যেকোনো নিয়মিত রিপিটেটিভ কাজ AI অনায়াসে করে ফেলতে পারে।
ট্রান্সলেশন ও রাইটিং: চ্যাটজিপিটির মতো টুলস কনটেন্ট লিখে দিতে পারছে সহজেই
ড্রাইভিং ও ডেলিভারি: স্বয়ংক্রিয় গাড়ি এখন বাস্তব। উবার, টেসলার মতো কোম্পানি ইতিমধ্যে চালকবিহীন গাড়ি চালাচ্ছে।
অ্যাকাউন্টিং ও ব্যাংকিং: সফটওয়্যারগুলো এখন হিসাব-নিকাশ অনেক বেশি নির্ভুলভাবে করতে পারছে।
AI ব্যবহারে লাভ কী?
- কোম্পানির খরচ কমে যায়
- মানুষ যেখানে ৮ ঘণ্টা কাজ করে, AI ২৪ ঘণ্টা করতে পারে
- ভুল কম হয়
- দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়
- এই কারণেই কোম্পানিগুলো মানুষ বাদ দিয়ে মেশিনের দিকে ঝুঁকছে।
তাহলে মানুষ কী করবে?
চিন্তার কিছু আছে, তবে ভয় পাওয়ার কিছু নেই—যদি সময় থাকতে প্রস্তুতি নিই।
Creative কাজ শেখা: যেমন গল্প লেখা, ভিডিও এডিটিং, ডিজাইন—যেখানে কল্পনা দরকার, AI এখনো সেখানে পুরোপুরি মানুষকে হারাতে পারেনি।
Problem Solving ও Emotional Intelligence: মানুষের অনুভব, সহানুভূতি, সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা এখনও AI-র বাইরে।
AI-কে ব্যবহার করা শেখা: যারা AI চালাতে জানে, তারা AI-এর উপরে বস boss হয়।
বাংলাদেশে কী প্রভাব পড়বে?
ফ্রিল্যান্সিং থেকে শুরু করে ব্যাংকিং পর্যন্ত অনেক জায়গায় AI প্রভাব ফেলবে।
ডাটা এন্ট্রি, কনটেন্ট রাইটিং, গ্রাফিক ডিজাইন—এসব ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় আমাদের টিকে থাকতে হলে নতুন স্কিল শিখতেই হবে।
তবে আবার নতুন নতুন কাজও তৈরি হবে:
AI অপারেটর, ডেটা অ্যানালিস্ট, প্রম্পট ডিজাইনার—এসব কাজ কয়েক বছর আগেও ছিল না!
শেষ কথা, AI থেমে যাবে না। বরং আমরা যদি এখন থেকেই এর সাথে তাল মিলিয়ে চলি, তাহলে চাকরি যাবে না—বরং বাড়বে।
যারা পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নিতে পারবে, তারা শুধু চাকরি বাঁচাবে না, বরং অন্যকে চাকরি দিতে পারবে।
“AI কি তোমার চাকরি খেয়ে ফেলবে? নাকি তুমি AI-কে কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যাবে—সিদ্ধান্ত এখন তোমার।”
মো: শরিফুল ইসলাম
এম.বি.এ ফাইনাল রেজাল্ট প্রত্যাশী
চৌদ্দগ্রাম, কুমিল্লা।