আগামী ৯ মার্চ কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। কুসিক মেয়র পদে উপনির্বাচনে লড়তে প্রার্থীদের দিন-রাত চলছে প্রচারণা। তবে এসব ছাপিয়ে এখন আলোচনায় আছে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা ৪ প্রার্থী হলফনামায় কি কি তথ্য আছে, তাদের আয়-ব্যয় কত? কুমিল্লা আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয়ে চার প্রার্থীর মনোনয়নপত্রের সঙ্গে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে দাখিল করা হলফনামাতে যা উল্লেখ করেছেন তা তুলে ধরা হল।
মনিরুল হক সাক্কুর হলফনামায় যা উল্লেখ করেছেন-
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের দুইবারের সাবেক মেয়র ও বিএনপির সাবেক নেতা ও টেবিল ঘড়ি প্রতীকের মনিরুল হক সাক্কু হলফনামায় উল্লেখ করেছেন, তিনি এসএসসি পাশ। তার পেশা ব্যবসা ও ঠিকাদারি।
হলফনামায় আরও উল্লেখ করা হয়, মনিরুল হক সাক্কুর বাৎসরিক আয় ৭২ লাখ ৩০ হাজার ৪২৬ টাকা। এর মধ্যে বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট, দোকানসহ অন্যান্য ভাড়া পান ৪২ লাখ ৯২ হাজার ৬৭৬ টাকা। শেয়ার, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক আমানত থেকে পান দুই লাখ টাকা। এ ছাড়া তার ব্যবসায়িক আয় ২৭ লাখ ৩৮ হাজার ১৫০ টাকা। নগদ, ব্যাংক জমা, বন্ড ও শেয়ার, ইলেকট্রনিক সামগ্রী ও আসবাবপত্র মিলিয়ে মোট অস্থাবর সম্পদ আছে ৩৮ লাখ ২৫ হাজার ৪৩৫ টাকা।
তার স্ত্রী আফরোজা জেসমিন টকলির নামে সম্পদ আছে তিন কোটি ৮১ লাখ ৮৭ হাজার ৬১৪ টাকা। এর বাইরে আছে স্বামী-স্ত্রীর মিলিয়ে ২০ তোলা স্বর্ণ ও দুটি জিপ গাড়ি। স্থাবর সম্পদের মধ্যে সাক্কুর কৃষিজমি আছে মনোহরগঞ্জের শরীফপুরে ২০ একর।
এ ছাড়া লালমাই মৌজায় ১০৪ শতক নাল ও ১৪৬ শতক পুকুর আছে। স্ত্রীর নামে গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে ১ দশমিক ২৩ একর ডাঙা জমি আছে।
ডা. তাহসিন বাহার সূচনা হলফনামায় যা উল্লেখ করেছেন-
কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সমর্থিত প্রার্থী ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বাস প্রতীকের ডা. তাহসিন বাহার সূচনা হলফনামায় উল্লেখ করেছেন, এমবিবিএস পাস এ প্রার্থী একজন ব্যবসায়ী।
হলফনামায় আরও উল্লেখ করা হয়, তাহসীন বাহার সূচনার বাৎসরিক আয় ১০ লাখ টাকা, শেয়ার, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক আমানত তিন লাখ ৬৪ হাজার ৭৬৩ টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে আছে নগদ টাকা আট লাখ ৪৬ হাজার ৯০ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ৫৬ লাখ তিন হাজার ৯১০ টাকা।
এ ছাড়া নাইস পাওয়ার অ্যান্ড আইটি থেকে আট লাখ টাকা, সোনালী সুইটস লিমিটেড থেকে ২৫ লাখ টাকা, ময়নামতি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে ১৫ লাখ টাকা, এমবি টেক্সটাইল অ্যান্ড ফ্যাক্টরি থেকে চার লাখ টাকা, গোমতী ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেড থেকে ১০ লাখ টাকা, পোস্টাল, সেভিংস সনদসহ বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্রে বা স্থায়ী আমানতের বিনিয়োগ এক কোটি ৫ লাখ টাকা, জিপ গাড়ি আছে ৯১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও ৪০ তোলা স্বর্ণের দাম এক লাখ টাকা, ইলেকট্রনিক সামগ্রী এক লাখ টাকা, আসবাব এক লাখ টাকা ও ব্যবসায় পুঁজি ৫ লাখ টাকা। স্থাবর সম্পদের মধ্যে রাজধানীর উত্তরায় ৪২ লাখ টাকার একটি ফ্ল্যাট আছে।
নিজাম উদ্দিন কায়সার হলফনামায় যা উল্লেখ করেছেন-
কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক নেতা ও ঘোড়া প্রতীকের নিজাম উদ্দিন কায়সার হলফনামায় উল্লেখ করেছেন, পেশায় তিনি একজন ব্যবসায়ী। তিনি বি কম উত্তীর্ণ। তার চাকরি থেকে বাৎসরিক আয় চার লাখ টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদ টাকা ৩২ লাখ ৪০ হাজার ৩৭ টাকা, ব্যাংকে জমা দুই লাখ ৮৩ হাজার ৭২০ টাকা, বন্ড ৪০ হাজার টাকা, স্বর্ণ ৩০ তোলা, টিভি ও ফ্রিজ এক লাখ ৯ হাজার টাকা। তার কোনো স্থাবর সম্পদ নেই।
নূর উর রহমান মাহমুদ তানিম হলফনামায় যা উল্লেখ করেছেন-
কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও হাতি প্রতীকের নূর উর রহমান মাহমুদ তানিম হলফনামায় উল্লেখ করেছেন, তিনি বিএ পাস। তার ব্যবসা থেকে বাৎসরিক আয় চার লাখ পাঁচ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদ টাকা দুই লাখ টাকা, স্ত্রীর নামে এক লাখ টাকা, ব্যাংকে নিজ নামে ২০ হাজার ও স্ত্রীর নামে ১০ হাজার টাকা আছে। স্ত্রীর ২০ ভরি স্বর্ণ আছে।
হলফনামায় আরও উল্লেখ করা হয়, স্থাবর সম্পদের মধ্যে যৌথ মালিকানায় ৮ শতক জমির মধ্যে তিনি দুই শতকের মালিক, তবে এনআরবিসি ব্যাংকে ৩০ লাখ টাকা ঋণ আছে।
আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘প্রার্থীরা তাদের সব তথ্য যুক্ত করে হলফনামা দিয়েছেন।’
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে কুমিল্লা সিটিতে দুই লাখ ৪২ হাজার ভোটার রয়েছে। এর মধ্যে ১ লাখ ১৮ হাজার ১৮২ জন পুরুষ ভোটার এবং ১ লাখ ২৮ হাজার ২৭৮ জন নারী ভোটার রয়েছেন। এ ছাড়া ২ জন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন।
এর আগে গত নির্বাচনে সিটিতে ভোটার ছিল ২ লাখ ২৯ হাজার ৯২০ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ছিল ১ লাখ ১৭ হাজার ৯২ জন, পুরুষ ভোটার ছিল ১ লাখ ১২ হাজার ৮২৬ জন। এবার উপনির্বাচনে পুরুষ ও নারী ভোটার বেড়েছে ১২ হাজার ৫৩৮ জন।