নভেম্বর ২৪, ২০২৪

রবিবার ২৪ নভেম্বর, ২০২৪

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকে যেসব কারণে বিতর্কিত কোষাধ্যক্ষ আসাদুজ্জামান

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকে যেসব কারণে বিতর্কিত কোষাধ্যক্ষ আসাদুজ্জামান
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকে যেসব কারণে বিতর্কিত কোষাধ্যক্ষ আসাদুজ্জামান। ছবি: কুবি প্রতিনিধি

যোগদানের পর থেকে নানা বিতর্কিত কান্ডের কারণে সমালোচনায় ছিলেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান। সর্বশেষ গত ২৮ এপ্রিল শিক্ষকদের উপর হামলা করে তিনি বিতর্কের ষোলোকলা পূর্ণ করেছেন।

এরপর থেকে তাঁর অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছেন শিক্ষকরা। কোষাধ্যক্ষ হিসেবে তিনি শিক্ষকদের উপর হামলা করে তিনি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে দায়িত্ব পালন করার যোগ্যতা হারিয়েছেন বলে দাবি করছেন শিক্ষকরা।

২০২০ সালের ৪ জুলাই কোষাধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। এর আগেও তিনি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের দায়িত্বও পালন করেছেন।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বরিশালের মুলাদীতে অধ্যাপক আসাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে ভাঙচুর ও গরু লুটের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় জেলার জ্যেষ্ঠ বিচারিক আদালতে বাদী হয়ে মামলা করেন উপজেলার বাটামারা ইউনিয়নের টুমচর গ্রামের নান্নু হাওলাদার।

২৮ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের একাংশ, সাবেক শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন মামলার আসামিদের নিয়ে শিক্ষকদের ওপর হামলা করেছেন আসাদুজ্জামান। এসময় তিনি শিক্ষকদের উপর উচ্চবাচ্য ও বাজে মন্তব্য করেন।

এক পর্যায়ে তিনি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদেরকে শিক্ষকদের ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতেন বলেন। যার ভিডিও গণমাধ্যমে ভাইরাল হলে তিনি বিতর্কের শিকার হন।

এ বিষয়ে অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো: শামিমুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ ড. আসাদুজ্জামান এর প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় ২৮ এপ্রিল অছাত্র ও বহিরাগত শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের উপর হামলা করেছে। ওইদিন আমিও হামলার শিকার হয়েছি। তিনি উপাচার্যের সকল অনিয়ম দূর্নীতির সহযোগী ছিলেন। আমরা সরকারের কাছে আহবান করবো যারা এই ধরনের অপেশাদার ও সহিংস কার্যক্রমের সাথে জড়িত তাঁদেরকে যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় অথবা জাতীয় পর্যায়ে কোন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া থেকে বিরত থাকে।

গত ১০ মে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছভুক্ত ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের বাণিজ্য বিভাগের ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। ওই দিন ভর্তি পরীক্ষার সার্বিক দিক দেখার কথা থাকলেও দায়িত্ব পালন না করে কোষাধ্যক্ষর বিরুদ্ধে সম্মানী নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে কোষাধ্যক্ষ এই সম্মানী নিয়েছেন বলে দাবি বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের।

এছাড়া কোষাধ্যক্ষ হয়েও তিনি বিভিন্ন সময় শিক্ষকদের ছুটি, নিয়োগ, পদোন্নতি ও যোগদানের ফাইলে হস্তক্ষেপ করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার শিক্ষকদের তোপের মুখে পড়েন তিনি।

এ বিষয়ে ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো: এমদাদুল হক বলেন, আমার শিক্ষা ছুটির ফাইলে তিনি হস্তক্ষেপ করেছেন। কোষাধ্যক্ষ হয়ে তিনি কখনো শিক্ষকদের ছুটি সংক্রান্ত ফাইলে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। এটা নিয়মের ব্যত্যয়।

শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান বলেন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে কলঙ্কিত কোষাধ্যক্ষ এই আসাদুজ্জামান। তিনি অনিয়ম, দূর্নীতি এবং সন্ত্রাসী কার্যক্রমে নজিরবিহীন ঘটনা ঘটিয়েছেন। তিনি উপাচার্যের দূর্নীতির দোসর হিসেবে কাজ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় এবং দেশের আইন ভেঙে তিনি উপাচার্যকে অবৈধভাবে ইনক্রিমেন্ট দিতেন। যেখানে সরকারি অর্থের অপচয় হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, তাঁর কোন বিশেষজ্ঞ জ্ঞান নেই এরপরেও তিনি ভুয়া বিশেষজ্ঞ হিসেবে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য বিভিন্ন ট্রেনিংয়ে প্রশিক্ষক হিসেবে যোগ দিতেন। ভর্তি পরীক্ষার যে অর্থ বণ্টন সেখানেও তিনি নীতিমালা অনুসরণ না করে তিনি উপাচার্যকে অবৈধভাবে প্রায় ১০ গুণ বেশি টাকা প্রদান করতেন এবং নিজেও নিতেন।

এছাড়াও তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ নিয়োগ বোর্ডে বসতেন সেখানে যোগ্যদের বাদ দিয়ে অযোগ্যদের নিয়োগ দেওয়ার জন্য উপাচার্যের সাথে থেকে দুর্নীতির দোসর হিসেবে কাজ করেছেন। শিক্ষকদের নিয়োগ ও পদোন্নতি নীতিমালা, শিক্ষা ছুটি নীতিমালা সবগুলো ভূলুণ্ঠিত করার জন্য তাঁর ভূমিকা রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে যে বিশৃঙ্খলা হচ্ছে এটার পিছনের কারিগর তিনি। জাতীয় মেডিকেল কলেজেও পরিচালনা কমিটির দায়িত্ব পালন করেছেন সেখানে অনিয়ম দুর্নীতির কারণে তাঁকে সেখান থেকে অপসারণ করা হয়েছে। এরকম একজন ভয়ংকর ব্যক্তি যদি কোন প্রতিষ্ঠানে থাকে তাহলে সে প্রতিষ্ঠানের সার্বিক অগ্রগতি কোনোভাবেই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে অর্জিত হবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের যে নিম্নমানের কাজগুলো হয়েছে সেগুলোতে ঠিকাদারদের কাছ থেকে যে জামানত রাখা হয়েছিল সেখানে অনিয়ম করে এই কোষাধ্যক্ষ ঠিকাদারকে প্রদান করেছেন। সেখানে ৯৬ লক্ষ টাকা তাঁরা ভাগ বাঁটোয়ারা করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উন্নয়নের জন্য কোন বাজেট না এনে তিনি উপাচার্যের বাংলো ও কার্যালয়ের সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য বরাদ্দ নিয়ে আসেন। এমন কলঙ্কিত কোষাধ্যক্ষ আমরা চাই না। শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। ভবিষ্যতে যাতে কেউ এই ধরনের দুর্নীতির সাথে যুক্ত না হয় সেজন্য আসাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে অচিরেই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। তাহলে এই ধরনের দুর্নীতিতে কেউ আর নিমজ্জিত হবে না। তিনি শিক্ষকদের উপর হামলার নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা আশা করি এ সংক্রান্ত চলমান তদন্ত কমিটিতে তাঁর অপরাধ চিহ্নিত করে ব্যবস্থার আওতায় আনার সুপারিশ করা হবে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামানের সাথে দেখা করার চেষ্টা করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।