ডিসেম্বর ১১, ২০২৪

বুধবার ১১ ডিসেম্বর, ২০২৪

কুমিল্লায় যুদ্ধ না হলেও যে কারণে নির্মিত হয়েছিল ২য় বিশ্বযুদ্ধের সমাধিস্থল

Rising Cumilla - Maynamati War Cemetery
ছবি: সংগৃহীত

যেন পাহাড়ের কোলে সাজানো সবুজ ঘাসের গালিচা। হরেক রকমের ফুল। গাছ-গাছালি ঘিরে সুনসান নীরবতা। এখানেই শায়িত আছেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত সৈনিকেরা। বলছি ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রির (যুদ্ধসমাধি) কথা।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের এই স্মৃতিস্মারক দেখতে প্রায় প্রতিদিন দেশ-বিদেশের নানা শ্রেণির মানুষ আসেন। কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের পশ্চিম পাশে কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকায় অবস্থিত এটি। এখানে ১৯৪১ সাল থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত ১৩টি দেশের ৭৩৮ জন সেনাকে সমাহিত করা হয়েছে।

কুমিল্লায় সরাসরি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ হয়নি। তাহলে সমাধিস্থল এখানে নির্মিত হয়েছিল কেন, এই প্রশ্ন অনেকের মনে ঘুরপাক খায়। ময়নামতিতে যুদ্ধসমাধি তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করে আসছে কমনওয়েলথ ওয়ার গ্রেভস কমিশন।

প্রতিষ্ঠানটির কান্ট্রি ম্যানেজার মুফতাহুস সাত্তার জানান, ‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ময়নামতিতে বড় একটি হাসপাতাল স্থাপন করা হয়েছিল। বার্মায় (বর্তমান মিয়ানমার) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আহত সৈনিকদের চিকিৎসার জন্য এ হাসপাতালে আনা হতো। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া সৈনিকদের সমাহিত করতে সমাধিস্থলের প্রয়োজন হয়। কাছেই সেনানিবাস, হাসপাতাল ও সৌন্দর্যের কারণেই ময়নামতির এই স্থানকে সমাধিস্থল হিসেবে বাছাই করা হয়।’

এ বিষয়ে কুমিল্লার ইতিহাস–গবেষক আহসানুল কবীর বলেন, ‘বিশ্বযুদ্ধের সময় কৌশলগত কারণে কুমিল্লা সেনানিবাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে ছিল। যুদ্ধসরঞ্জাম সরবরাহ, বিমানঘাঁটি ও ১৯৪৪ সালে ইম্ফলে স্থানান্তরিত হওয়ার আগে ফোরটিনথ আর্মির (চতুর্দশ সেনাবাহিনী) সদর দপ্তর ছিল কুমিল্লায়। জেনারেলদের গুরুত্বপূর্ণ সভাগুলো এখানে হতো। এ জন্য যুদ্ধাহত সৈনিকদের চিকিৎসার জন্য ময়নামতিতে নির্মিত হাসপাতালে আনা হতো। সেখানে মারা যাওয়া সৈনিকদের সমাহিত করতে ১৯৪৩-৪৪ সালে ময়নামতিতে যুদ্ধ সমাধিক্ষেত্র তৈরি করা হয়।’

প্রসঙ্গত, কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের পশ্চিম পাশে কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকায় অবস্থিত ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রিতে ১৯৪১ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত ৭৩৮ জন সেনাকে সমাহিত করা হয়। এর মধ্যে ১৯৬২ সালে একজন সৈনিকের দেহাবশেষসহ সমাধির মাটি তার স্বজনেরা যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যান। ১৩টি দেশের ৭৩৭ জন যোদ্ধার মধ্যে ইসলাম ধর্মের ১৭২ জন, বৌদ্ধধর্মের ২৪ জন, হিন্দুধর্মের ২ জন ও বাকিরা খ্রিষ্টধর্মাবলম্বী। এর মধ্যে যুক্তরাজ্যের ৩৫৭ জন, কানাডার ১২, অস্ট্রেলিয়ার ১২, নিউজিল্যান্ডের ৪, দক্ষিণ আফ্রিকার ১, অবিভক্ত ভারতের ১৭১, রোডেশিয়ার ৩, পূর্ব আফ্রিকার ৫৬, পশ্চিম আফ্রিকার ৮৬, বার্মার (বর্তমান মিয়ানমার) ১, বেলজিয়ামের ১, জাপানের ২৪ জন এবং পোল্যান্ডের ১ জনের সমাধি আছে।

প্রতি বছরের নভেম্বর মাসে কমনওয়েলথভুক্ত দেশের হাইকমিশনারসহ তাদের প্রতিনিধিরা এই সমাধিস্থলে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান হিসেবে পরিচিত। কমনওয়েলথ গ্রেভইয়ার্ড কমিশন এ যুদ্ধ সমাধিক্ষেত্র তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করে আসছে।