মার্চ ১৮, ২০২৫

মঙ্গলবার ১৮ মার্চ, ২০২৫

একনজরে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদের পরিমান

Rising Cumilla.Com - Natural resources of Bangladesh

একটি দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ সে দেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এমন অনেক দেশ আছে যে দেশগুলো সরাসরি প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর নির্ভরশীল। যেমন সৌদি আরবের অর্থনীতি তেলের উপর নির্ভরশীল। কারণ সেদেশে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পেট্রোলিয়াম মজুদ রয়েছে এবং দেশটি বিশ্বের পেট্রোলিয়ামের বৃহত্তম রপ্তানিকারক।

বাংলাদেশ প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর। এ দেশে নবায়নযোগ্য ও অ-নবায়নযোগ্য দুই সম্পদ-ই রয়েছে যা দেশের পরিবেশ ও অর্থনীতিতে অনেকাংশে প্রভাব ফেলে। এমন কয়েকটি প্রাকৃতিক সম্পদের বর্তমান প্রেক্ষাপট নিয়ে আলোচনা করা যাক।

সৌর শক্তি: সৌর শক্তি এক ধরনের নবায়নযোগ্য সম্পদ যা দেশের বিদ্যুতের সংকট কমিয়েছে। বাংলাদেশ দক্ষিণ-এশিয়ার ২০°৩৪’ উত্তর থেকে ২৬°৩৮’ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°০১’ পূর্ব থেকে ৯২°৪১’ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থান করায় সৌর শক্তি উৎপাদনের জন্য উপযোগী বলে গণ্য করা হয়। বাংলাদেশ জাতীয় গ্রেডের জন্য সোলার ভিত্তিক ৫০০ মেগাওয়াট উৎপাদনের জন্য সরকার ৩১ মার্চ, ২০২৪ একটি কর্মসূচি শুরু করেছে যা ৫০০ মেগাওয়াট সোলার বিদ্যুৎ উন্নয়ন কর্মসূচি বলে পরিচিত। এই ৫০০ মেগাওয়াট সৌর কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য ২.৭৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দরকার হবে যার মধ্যে ২.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার উন্নয়ন অংশীদারের নিকট থেকে। সাম্প্রতিক কিছু প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল যেমন, MW (AC) Solar Park, পঞ্চগড, 100 MW (AC) Solar Park, তিস্তা ব্যারেজ লালমনিরহাট, 10MW (AC) Solar Park, মৌলভীবাজার,10 MWp Grid-Tied Solar Power Project, গোয়াইনঘাট, সিলেট 200 MW (AC) Solar Park , গাইবান্ধা, 20MW (AC) Solar Park, কক্সবাজার, 30MW (AC) Solar Park, গংগাচড়া, রংপুর বাস্তবায়িত হয়েছে ৬০ মেগাওয়াট সোলার পার্ক, রাঙ্গুনিয়া, ৫৫ মেগাওয়াট গঙ্গাচড়া সোলার পার্ক, BOO ভিত্তিক ধরলা ৩০ মেগাওয়াট সোলার পার্ক ইত্যাদি।

হাইড্রোপাওয়ার: জলবিদ্যুৎ পৃথিবীর মোট বিদ্যুতের ২০% এবং নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের ৮৮% উৎপন্ন করে। একবার যদি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করা সম্ভব হয়, খুব কম শক্তি ব্যয়ের মাধ্যমে এটি চালানো যায়। বাংলাদেশের একমাত্র হাইড্রোপাওয়ার স্টেশন অর্থাৎ জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র রাঙামাটি জেলার, কাপ্তাইয়ে অবস্থিত। আগে এর বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ৮০ মেগাওয়াট যা বর্তমানে ২৩০ মেগাওয়াটে উন্নিত করা হয়।

মৎস্য সম্পদ: শত শত নদ-নদীর বেষ্টনীতে গড়ে ওঠেছে বাংলাদেশ যার ফলে এদেশে মৎস্য সম্পদের অভাব আগেও ছিল না এখনো নেয়। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার রিপোর্ট ২০২২ অনুযায়ী বিশ্বে অভ্যন্তরিণ মুক্ত জলাশয়ে মৎস্য বাংলাদেশ ৩য়, বদ্ধ জলাশয়ে ৫ম, সামুদ্রিক ও উপকূলীয় ক্রাস্টসিয়া উৎপাদনে ১১ তম স্থানে রয়েছে। ইলিশ আহরণে বাংলাদেশ ১ম এবং তেলাপিয়া উৎপাদনে ৪র্থ এবং এশিয়ায় ৩য়। বাংলাদেশের ইলিশ ও চিংড়ি জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। চিংড়িকে বলা হয় হোয়াইট গোল্ড। আমাদের মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানি হচ্ছে ৫২টি দেশে যা অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা পালন করে। সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, দেশে বছরে মাছ উৎপাদিত হয় ৪৭.৫৯ মেট্রিক লাখ টন। বিশ্ব বাজারে আর্থিক মন্দাবস্থা সত্বেও ২০২২-২৩ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছে ৬৯ হাজার ৮৮১ টন মৎস্য, আয় হয়েছে ৪ হাজার ৭৯০ কোটি ডলার। বর্তমানে দেশের খালে বিলে হাওড়ে বাঁওড়ে মাছের পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে তবে আধুনিক মৎস্য চাষাবাদ পদ্ধতি ফের দেশকে বাড়তি যোগান এনে দিয়েছে।

বনজ সম্পদ: একটি দেশের বনভূমি যেখানে ২৫ শতাংশ হওয়া দরকার, সেখানে বাংলাদেশের বনভূমি মাত১৪.১ শতাংশ যা ২০১৪ সালে ছিল ১২.৮ শতাংশ। প্রকৃতি বিষয়ক সংস্থাগুলোর আন্তর্জাতিক জোট আইইউএসএন- বাংলাদেশের সাবেক এদেশীয় পরিচালক ইশতিয়াক প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশে যা বনভূমি রয়েছে তা যথেষ্ট নয়। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ‘দ্য স্টেট অব ওয়ার্ল্ড ফরেস্ট-২০২২’ শীর্ষক প্রতিবেদনে ওঠে এসেছে, বিশ্বের ২৬০ কোটি মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বনজ সম্পদ ব্যবহার করে থাকেন যা বাংলাদেশের প্রায় ১০ কোটি ৮০ লাখ। তারা বনের ভেতরের ও বাইরের সম্পদ ব্যবহার করে যার মধ্যে রয়েছে কাঠ, বাঁশ, পাতা, ফলমূল ও ঔষধি সামগ্রী যার মধ্যে ৯৮ শতাংশ-ই সাধারণ মানুষ। একটি দেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় ও দূর্যোগ ( ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, তুফান) মোকাবিলায় বনভূমির গুরুত্ব রয়েছে যেমন বাংলাদেশের সুন্দরবন। বাংলাদেশের ১২৭৬ মিলিয়ন টন কার্বনের প্রায় ২২ শতাংশ বনাঞ্চলে, ১০ শতাংশ পাহাড়ি বনে, ৫.৫ শতাংশ সুন্দরবনে অবস্থিত। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৮৫৪ মার্কিন ডলার মূল্যের বনজ সম্পদ সংগ্রহ করা হয়েছিল।

প্রাকৃতিক গ্যাস: বাংলাদেশের প্রথম গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার হয়েছিল ১৯৫৫ সালে সিলেটের হরিপুরে। বর্তমানে বাংলাদেশে ২৯ টি গ্যাসক্ষেত্র চলমান আছে। বাংলাদেশ এশিয়ার ১৯তম বৃহৎ গ্যাস উৎপাদনকারী দেশ। দেশীয় জ্বালানী চাহিদার ৫৬ শতাংশ পূরণ করে গ্যাস। কীটনাশক, ঔষধ, রাবার, প্লাস্টিক, কৃত্রিম তন্তু প্রভৃতি তৈরির জন্য প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করা হয়। চা বাগানগুলো রশিদপুরের প্রাকৃতিক গ্যাসের উপর নির্ভরশীল। কয়েকটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ফার্নেস তেলের পরিবর্তে প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার হয়। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদন ছিল দিনে ২ হাজার ৬৪৩ মিলিয়ন ঘনফুট যা পরের বছর কমে হয় ২ হাজার ৪২৩ মিলিয়ন ঘনফুট। ২০২২-২৩ অর্থবছরে উৎপাদন হয় ২ হাজার ২০১ মিলিয়ন ঘনফুট এবং জাতীয় সংস্থা গুলোর এই বছরের উৎপাদন ছিল ৩০০.৭০ বিলিয়ন কিউবিক ফিট। তিনটি জাতীয় ও দুটি আন্তর্জাতিক সংস্থা উৎপাদন করে ৮০৩.০১ বিসিএফ। ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ (বাসস) : বিদ্যুৎ জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ মজুদ জানিয়েছেন, দেশে বর্তমানে ৮.৪৬ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস মজুদ রয়েছে। যা দিয়ে আগামী প্রায় ১১ বছর সরবরাহ করা সম্ভব হতে পারে।

কয়লা: বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে এখন পর্যন্ত পাঁচটি কয়লা খনি আবিস্কার হয়েছে যেখানে ৭ হাজার ৮২৩ মিলিয়ন টন কয়লার মজুদ আছে। এখান থেকে মাত্র ২০ শতাংশ কয়লা উত্তোলন করা সম্ভব। বর্তমানে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে বছরে ১ মিলিয়ন টন কয়লা উৎপাদন করা হয়। কয়লা দেশের জ্বালানি চাহিদা পূরণ করে। কয়লা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় বর্তমানে মাতার বাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র , বাঁশখালি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ইত্যাদি।

লেখা: তাসনিম সুরাইয়া তাহসিন, শিক্ষার্থী,অর্থনীতি বিভাগ,কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।