নভেম্বর ২৬, ২০২৪

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

আইন মেনেই পদন্নোতি বেতন পেলেন বেরোবির ৪র্থ গ্রেডের সেই কর্মকর্তারা

Rising Cumilla -Begum Rokeya University Hall
ছবি: প্রতিনিধি

আইন মেনেই ৪র্থ গ্রেডে পদোন্নতি হয়েছে বেগম রোকেয়া বিশ্বিবদ্যালয়ের নয় কর্মকর্তার। বেতন-ভাতাও চালু রয়েছে তাদের। এমনকি চলতি মাসের বেতনও পেয়েছেন ৪র্থ গ্রেড হিসেবে। কর্মকর্তাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতেই মূলত এসব তথ্য ছড়ানো হচ্ছে।

এই বিষয়ে অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়টি পরিচালিত হয় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আইন ও বিধি-বিধান দ্বারা। বেগম রোকেয়া বিশ্বিবদ্যালয়, রংপুর আইন ২০০৯ এর প্রথম সংবিধির ধারা-৬ এর ২ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কর্মকর্তাগণের নিয়োগ বাছাই বোর্ড গঠন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরু থেকে অদ্যাবধি এই নিয়োগ বাছাই বোর্ড দিয়েই পদোন্নতি বোর্ড অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। পদোন্নতির জন্য পৃথক কোনো বাছাই বোর্ড নেই। তবে আবেদন পত্র যাচাই-বাছাই করার জন্য একটি কমিটি রয়েছে। ফলে আবেদনপত্র যাচাই-বাছাই কমিটির সুপারিশের আলোকে পদোন্নতির জন্য নিয়োগ বাছাই বোর্ডে প্রার্থীকে ডাকা হয়। নিয়োগ বাছাই বোর্ডের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নির্বাহী সংস্থা সিন্ডিকেট সভা সেই নিয়োগ অনুমোদন দিয়ে থাকে।

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর আইন ২০০৯ এর প্রথম সংবিধির ধারা ৩৯ (২) দ্রষ্টব্য এর উপধারা ৬(২) মোতবেক চলতি বছরের ৩১ মে অনুষ্ঠিত নিয়োগ বাছাই বোর্ডের সভাপতিত্ব করেন মাননীয় উপাচার্য, পদাধিকারবলে সদস্য ছিলেন ট্রেজারার, একই সঙ্গে তিনি বিশেষজ্ঞ সদস্য ছিলেন।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর আইন ২০০৯ এর প্রথম সংবিধির ধারা ৩৯ (২) দ্রষ্টব্য এর উপধারা ৬ এর ২ (চ) মোতাবেক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. মজিব উদ্দিন আহমদকে নিয়োগ বাছাই বোর্ডের বিশেষজ্ঞ সদস্য হিসেবে সিন্ডিকেট সভায় মনোনয়ন দেওয়া হয়। পরবর্তীতে তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার নিয়োগ হলে ধারা ৩৯ (২) দ্রষ্টব্য এর উপধারা ৬ এর ২ (গ) মোতাবেক পদাধিকার বলে নিয়োগ বাছাই বোর্ডের সদস্য হন।

সংস্থাপন শাখার প্রধান ড. জিয়াউল হক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ধারা ৩৯ (২) দ্রষ্টব্য এর উপধারা ৫(৬) এর মোতাবেক “বাছাই কমিটি মনোনীত কোনো সদস্য দুই বৎসর মেয়াদের জন্য সদস্য পদে অধিষ্ঠিত থাকিবেন; তবে শর্ত থাকে যে, তাহার মেয়াদ শেষ হওয়া সত্তে¡ও তাঁহার উত্তরাধিকারী স্থলাভিষিক্ত না হওয়া পর্যন্ত তিনি উক্ত পদে বহাল থাকিবেন।” যেহেতু বাছাই বোর্ড পুনর্গঠন করা হয়নি; যেহেতু একই সদস্য দুই বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরও সদস্য হিসেবে থাকতে আইনগত কোনো বাধা নেই; সেহেতু তিনি উল্লিখিত ধারা মোতাবেক বাছাই বোর্ডের বিশেষজ্ঞ সদস্য হিসেবে উপস্থিত থাকতে পারেন। গতবছর ২১ ডিসেম্বর উপ-রেজিস্ট্রার পদে পদোন্নতি বোর্ডেও তিনি বিশেষজ্ঞ সদস্য ও ট্রেজারার হিসেবে স্বাক্ষর করেছেন। একইভাবে ২০২১ সালের ১০ আগস্ট তারিখে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ৮০তম সভায় ধারা ৫(২) (চ) মোতাবেক অধ্যাপক ড. মজিব উদ্দিন আহমদকে ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ বাছাই বোর্ডের সদস্য মনোনয়ন দেওয়া হয়। পরবর্তীতে তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্রেজারার নিযুক্ত হওয়ার পর থেকে ওই বিভাগের নিয়োগ বাছাই বোর্ডের বিশেষজ্ঞ সদস্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার হিসেবে দুইটি স্বাক্ষর করে আসছেন ড. মজিব উদ্দিন আহমদ।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, যদি কোনো বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডিনের দায়িত্বে থাকেন; তিনিও একাই নিয়োগ বাছাই বোর্ডে দুইটি স্বাক্ষর করে থাকেন। এ সংক্রান্ত বেশকিছু প্রমাণ এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। এ থেকে জানা যায়, চলতি বছরের ২৬ জুন অনুষ্ঠিত অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক প্রদে নিয়োগ বাছাই বোর্ডে ডিন ও বিভাগীয় প্রধান হিসেবে প্রফেসর ড. মোঃ মোরশেদ হোসেন স্বাক্ষর করেন। ২০১৮ সালের ২৮ অক্টোবর অনুষ্ঠিত সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক নিয়োগ বোর্ডে উপাচার্য ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ উপাচার্য, ট্রেজারার, ডিন ও বিভাগীয় প্রধান হিসেবে একাই চারটি স্বাক্ষর করেন। চলতি বছরের ১১ মার্চ অনুষ্ঠিত পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক নিয়োগ বোর্ডে প্রফেসর ড. গাজী মাজহারুল আনোয়ার বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দুটি স্বাক্ষর করেন। এরকম অসংখ্য বাছাই বোর্ড অনুষ্ঠিত হয়েছে যেখানে একজন একাধিক পদে স্বাক্ষর করেছেন।

এর আগেও এই বিশ্ববিদ্যালয়ে একইভাবে শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের পদোন্নতির অনেক বাছাই বোর্ড অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর আমলে ২০১৭ সালের ৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পদ হতে উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পদে পদোন্নতির জন্য বাছাই বোর্ডে দুইজনকে পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়। সেই নিয়োগ বাছাই বোর্ডের সভাপতি প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ উপাচার্য হিসেবে এবং ট্রেজারার না হয়েও ট্রেজারার হিসেবে একাই দুটি স্বাক্ষর করেন। আর বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস এর তৎকালীন উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. এম আবুল কাশেম মজুমদার সদস্য হিসেবে একটি স্বাক্ষর করেন। মূলত: দুইজনে মিলেই পদোন্নতি বোর্ড সম্পন্ন করেছেন। সেই বাছাই বোর্ডে প্রথম সংবিধির ধারা ৬ মোতাবেক কোনো ডিন কিংবা সচিব কাউকেই রাখা হয়নি। একই দিন একইভাবে দুইজনে মিলে অনুষ্ঠিত বাছাই বোর্ড আরো দুইজনকে উপ-রেজিস্ট্রার পদে পদোন্নতির সুপারিশ করে। শুধু এটিই নয়, এ ধরণের অসংখ্য নজির রয়েছে যা এই প্রতিবেদকের হাতে রয়েছে। সুতরাং যেখানে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতোপূর্বে দুইজনে মিলে তিন স্বাক্ষরে বাছাই বোর্ড আয়োজন করার নজির রয়েছে এবং দুইজনে মিলে অনুষ্ঠিত সেই বোর্ড যাদেরকে পদোন্নতি দিয়েছে; সেখানে তারাই এবার পদোন্নতি না পেয়ে তিন সদস্যের উপস্থিতিতে চার স্বাক্ষরের বোর্ডকে আইনের ব্যত্যয় বলছেন; যা ক্যাম্পাসে রীতিমত হাস্যরসের সৃষ্টি করেছে।

সংস্থাপন শাখা-২ এর শাখা প্রধান মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান মন্ডল বলেন, যে কয়জন কর্মকর্তা চলতি বছরের ৩১ মে অনুষ্ঠিত ৪র্থ গ্রেডভুক্ত অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার/সমমান পদে পদোন্নতি বোর্ড নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন; তারাও উক্ত বাছাই বোর্ডে পদোন্নতির জন্য অংশগ্রহণ করেছেন। বোর্ডে সদস্য কারা তা তারা আগে থেকেই জনতেন। বাছাই বোর্ড অনুষ্ঠানের আগে বা পরে ৫ম গ্রেডের কর্মকর্তা বাছাই বোর্ডের সদস্য কিংবা একই ব্যক্তির দুই স্বাক্ষর বিষয়ে তারা কোনো আপত্তি উত্থাপন করেননি; তারা বাছাই বোর্ড অনুষ্ঠানের এক মাস পর সিন্ডিকেট সভায় তাদের পদোন্নতি না হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে নিয়োগ বাছাই বোর্ড নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন; যা গ্রহণযোগ্য নয় বলে মনে করি।

অনুসন্ধানে আরো জানাগেছে, অর্থমন্ত্রণালয়ের ৫ম গ্রেডের উপ-সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে নিয়োগ বাছাই বোর্ডের সদস্য করায় কয়েকজন কর্মকর্তা পদোন্নতি বঞ্চিত হয়েছেন মর্মে যে অভিযোগ করেছেন; তা সঠিক নয়। কারণ, সেই নিয়োগ বাছাই বোর্ডে ১ম গ্রেডের তিন সদস্যের উপস্থিতিসহ চার সদস্যের স্বাক্ষর রয়েছে। চারজন সদস্যের ঐক্যমতের ভিত্তিতেই পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়।

কাউন্সিল শাখার প্রধান মোঃ ময়নুল আজাদ জানান, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর আইন ২০০৯ এর প্রথম সংবিধির ধারা ৩৯ (২) দ্রষ্টব্য এর ধারা ৬ এর ২ (ঙ) মোতাবেক একজন উপ-সচিবকে নিয়োগ বোর্ডের সদস্য মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। ৫ম গ্রেডের কোনো কর্মকর্তাকে বাছাই বোর্ডের সদস্য রাখা যাবে না, এমন কোনো বাধ্যবাধকতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন কিংবা বিধি-বিধান নেই। এর আগেও এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন নজির রয়েছে।
জানাগেছে, ২০১০ সালে বা তৎপরবর্তী সময়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০ম গ্রেড থেকে শুরু করে ৫ম গ্রেড পর্যন্ত যে সকল কর্মকর্তা নিয়োগ হয়েছে; সব নিয়োগ বোর্ডে একজন এনজিও কর্মকর্তাকে প্রথম সংবিধির ধারা ৬ এর ২ (ঙ) মোতাবেক নিয়োগ বাছাই বোর্ডের সদস্য রাখা হয়েছে। যার কোনো গ্রেড-ই নাই। তিনি ২০১০ সালের ২৯ মার্চ ৭ম গ্রেড এবং ৫ম গ্রেডের একধিক কর্মকর্তা নিয়োগ বোর্ডের সদস্য ছিলেন।

কান্সিল শাখার একজন কর্মকর্তা জানান, কর্মকর্তা নিয়োগের জন্য এই বিশ্ববিদ্যালয়ে দুইটি বোর্ড রয়েছে। এরমধ্যে রেজিস্ট্রার/সমমান ৩য় গ্রেড পদমর্যাদার পদের জন্য এক ধরণের বাছাই বোর্ড। আর ৪র্থ গ্রেড হতে ১০ গ্রেড পর্যন্ত পদমর্যাদার পদের জন্য একটি বোর্ড গঠন করা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে প্রথম সংবিধির ধারা ৩৯ (২) দ্রষ্টব্য এর ধারা ৬ এর ২ (ঙ) মোতাবেক একজন উপ-সচিবকে ৪র্থ গ্রেড হতে ১০ গ্রেড পর্যন্ত পদমর্যাদার পদের জন্য সকল নিয়োগ বোর্ডের একজন সদস্য হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়। যেহেতু, বিশ^বিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী উক্ত বাছাই বোর্ড গঠিত হয়েছে; যেহেতু এর আগে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে নন গ্রেডের একজন এনজিও কর্মকর্তাকে উক্ত বাছাই বোর্ডের সদস্য রাখা হয়েছে; সুতরাং চলমান এই প্রক্রিয়াটি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কাস্টম। এতে আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি।

ইউজিসির নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কেন পদোন্নতি দেওয়া হলে জানাতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ হাসিবুর রশীদ বলেন, আমি ৪র্থ গ্রেডে পদোন্নতি দেওয়ার আগে ইউজিসিকে লিখিত ও মৌখিকভাবে জানিয়েছে যে, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও যথাযথ চ্যানেলে (বিশ্ববিদ্যালয় হতে ইউজিসি হতে শিক্ষামন্ত্রণালয়) এর অর্গানোগ্রাম অনুমোদিত হয় ২০১১ সালে। উক্ত অর্গানোগ্রামে তৃতীয় গ্রেডভুক্ত পদ রয়েছে ০৯টি এবং চতুর্থ গ্রেডভুক্ত পদ রয়েছে ১০টি।

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর আইন ২০০৯ অনুসরণে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি সংক্রান্ত একটি নীতিমালা ২০১০ সালে প্রণয়ন করা হয়। ২০১৪ সালে একটি কমিটির মাধ্যমে নীতিমালাটি সংশোধন করা হয়। উক্ত নীতিমালার আলোকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মকর্তাবৃন্দের পদোন্নতি হয়ে থাকে। ইতোমধ্যে নীতিমালাটির অনুসরণে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতোপূর্বে দুইজনকে অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার এবং একজনকে অতিরিক্ত পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) পদে আপগ্রেডেশনের মাধ্যমে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্গানোগ্রামে জনবল অনুমোদন সংক্রান্ত একটি পত্রের সূত্র ধরে গত ২০২১ সালের ৩১ অক্টোবর তারিখে ইউজিসি কর্তৃক সকল বিশ^বিদ্যালয়ে প্রেরিত পত্রে (স্মারক: ৩৭.০১.০০০০.১৫১.৯৯.০০৭.২০.১৬৭, তারিখ: ৩১.১০.২০২১) চতুর্থ গ্রেডভুক্ত পদে সরাসরি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিয়োগ দিতে এবং পর্যায়োন্নয়ন বা আপগ্রেডেশন না দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আপগ্রেডেশনের মাধ্যমে চতুর্থ প্রেডভুক্ত পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত তিনজন কর্মকর্তার বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। অথচ, শিক্ষামন্ত্রণালয় কর্তৃক অনুমোদিত এই বিশ^বিদ্যালয়ের অর্গানোগ্রামে চতুর্থ প্রেডভুক্ত ১০টি পদ রয়েছে। সুতরাং ইউজিসি ও শিক্ষামন্ত্রণালয় ১০ পদের অনুমোদন দিয়ে তা বন্ধ করা সম্ভব নয়।
মজার বিষয় হলো, ২০২১ সালের ৩১ অক্টোবর ইউজিসি কর্তৃক সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রেরিত পত্রে চতুর্থ গ্রেডভুক্ত পদে পর্যায়োন্নয়ন বা আপগ্রেডেশন না দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হলেও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে চতুর্থ গ্রেডভুক্ত অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার/সমমান পদে আপগ্রেডেশনের মাধ্যমে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যলয়সহ বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে চতুর্থ গ্রেডভুক্ত উপ-রেজিস্ট্রার/সমমান পদে নিয়মিতভাবে আপগ্রেডেশনের মাধ্যমে পদোন্নতি প্রদান করা হয়ে থাকে। সুতরাং এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদিত অর্গানুগ্রামে ১০টি পদ থাকার পরে আর অনুমোদনের প্রয়োজন নেই বলে মনে করি।
ড. হাসিবুর রশীদ আরো জানান, গত ০১ জুন অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ১০৩তম সভায় বিষয়টি উত্থাপন করা হলে সিন্ডিকেট সদস্যবৃন্দ সকলে একমত পোষণ করেন যে, একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পদোন্নতি সংক্রান্ত দুই ধরণের রীতি চলা উচিৎ নয়। এতে কর্মকর্তাদের মাঝে অসন্তোষ বাড়বে এবং প্রশাসনিক শৃঙ্খলা বিনষ্ট হবে। প্রয়োজনে বিষয়টি নিয়ে সিন্ডিকেট সভার একটি প্রতিনিধি দল ইউজিসিতে গিয়ে আলোচনা করবে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৩ জুন উপাচার্যের নেতৃত্বে সিন্ডিকেটের আরো সম্মানীত দুইজন সদস্য যথাক্রমে ডুয়েটের উপাচার্য ও যবিপ্রবির উপাচার্য ইউজিসির চেয়ারম্যানের সাথে সাক্ষাৎ করে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। তাঁরা মৌখিক ও লিখিতভাবে বেগম রোকেয়া বিশ^বিদ্যালয়ের পক্ষে ব্যাখ্যা প্রদান করেন। দ্বিপাক্ষিক এই আলোচনার পর ইউজিসির পক্ষ থেকে ২৯ জুন পূর্বনির্ধারিত সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠানের আগ পর্যন্ত আর কোনো নিষেধাজ্ঞা/নির্দেশনা না আসায় সিন্ডিকেট সভায় বিস্তারিত পর্যালোচনা শেষে পদোন্নতির বিষয়টি সকলের ঐক্যমতের ভিত্তিতে পদোন্নতির বিষয়টি অনুমোদন দেওয়া হয়।

এদিকে পদোন্নতি বঞ্চিত হয়ে পাঁচ কর্মকর্তা উচ্চ আদালতে রীট পিটিশন দায়ের করে। হাইকোর্ট বিষয়টির উপরে ২৪ জুলাই স্যাস্টাস কো (স্থতি অবস্থা) প্রদান করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন কর্মকর্তা রেহেনা মনি বলেন, যেহেতু হাইকোর্ট স্যাটাস-কো দেওয়ার আগেই পদোন্নতিপ্রাপ্তরা যোগদান করেছেন; সেহেতু তারা পদোন্নতিপ্রাপ্ত পজিশনেই স্ট্যাটাস বহন করবেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ শওকাত আলী সাংবাদিকদের বলেন, চলতি মাসের বেতন দেওয়ার দিন কয়েকজন কর্মকর্তা জানালেন আটজন কর্মকর্তার ৪র্থ গ্রেডভুক্ত পদে পদোন্নতির ওপর হাইকোর্টে রীট করা আছে। যেহেতেু আইনী বিষয়, তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন উপদেষ্টার মতামত নিয়ে ৪র্থ গ্রেডেই তাদের বেতন ছাড়া হয়েছে।