
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতর্ক সংশ্লিষ্ট ক্লাব (Jahangirnagar University Debate Organization – JUDO) এর অভ্যন্তরীণ র্দ্বন্দ্ব ও নেতৃত্বের বিতর্ক নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলেছেন সংগঠনটির সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক “ফাতিমা তুজ জোহরা বৈশাখী”। গত পরশুদিন দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বর্তমান নেতৃত্বের প্রতি তীব্র সমালোচনা করেন।
তার মতে, সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্ব এখন গণতান্ত্রিক চর্চা ও সদস্যদের মতামতকে উপেক্ষা করে একক সিদ্ধান্ত গ্রহণে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। এ ধরনের নেতৃত্বের ফলে সংগঠনের ঐতিহ্য ও লক্ষ্য হুমকির মুখে পড়ছে বলেও মনে করেন তিনি।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, “একটা মানুষ ৪ বছর ডেডিকেটেডলি একটা ক্লাবে সময় দেয়৷ স্বয়ং শত্রুরাও স্বীকার করছে এই মানুষটা ক্লাবের জন্য কি কি না স্যাক্রিফাইস করেছে। এরপর সে ক্লাবের সর্বোচ্চ প্রেস্টিজিয়াস পদটা পায়। এমনভাবে তাকে কর্ণার করে মেন্টাল ট্রমা দেয়া হয় যে সে বাধ্য হয় গত ৬ই মে রিজাইন লেটার দিতে৷ এরপর সিনিয়ররা অনেক বোঝায় যার ফলশ্রুতিতে ৭/৮ মে রিজাইন লেটার প্রত্যাহার করা হয়৷ এর মাঝখানে আমি কেনো এত বড় জায়গা ছেড়ে দিতে চাচ্ছি এ নিয়ে বিন্দু পরিমাণ জানার আগ্রহ সিনিয়র কর্তৃক দেখিনি।”
“নিজে অনেক চেষ্টা করেছি অনেকের সাথে কথা বলার, সেখানেও পার্সোনাল এটাকের স্বীকার হই। প্রত্যাহার করার পর ঠিক যেই যেই কারণে রিজাইন লেটার দিয়েছি কারণগুলা একইভাবে চলতে থাকলে আমি আবার সিনিয়রদের সাথে যোগাযোগ করি৷ আমাকে আশ্বাস দেয়া হয় ইন্টার হলের পর আমার সাথে যোগাযোগ করবে। ইন দা মিন টাইম আমার ব্যাক্তিগত বেটারমেন্টের জন্য আমার মাথায় চিন্তা আসে আমি পুনরায় রিজাইন দিয়ে জাডসে যাবো (৭ দিন অপেক্ষা করেও কোনো সিনিয়র সমাধানের জন্য চেষ্টা করেননি)৷”
“জেইউডিও’র ভাষ্যমতে আমি তাদেরকে সময় না দিয়েই অনেক আগেই জিএস থাকা অবস্থা থেকেই জাডসের মানুষের সাথে সম্পর্ক রেখেছি এবং যোগাযোগ করেছি জাডসে যাবার ব্যাপারে এইটা শৃঙ্খলাভঙ্গ। এখন কথা হচ্ছে আমি সেটা করেছি কি না? হ্যাঁ আমি নিজে অনেকের পরামর্শ নিয়েছি, জেইউডিও’র প্রতি ওই সময়ের আবেগের জন্য অনেক দ্বিধাদ্বন্দে ছিলাম। তবে আমি জিএস থাকা অবস্থায় কখনো ফর্মালি জাডসের মেম্বার ছিলাম না। গত ১৬ই মে জাডসকে মৌখিকভাবে কনফার্মেশন দেই এবং ১৮ তারিখ পুনরায় রিজাইন করে জাডসের সেশনে যাই গতকাল। এইটা তাদের কাছে বিট্রায়াল, এই জন্য আমার প্রতি এই অভিযোগ এনে পাব্লিক পোস্ট আনে তারা।”
“এখন কথা হচ্ছে তারা যদি জানতোই ৮ তারিখ আমি রিজাইন লেটার প্রত্যাহার করার পরেও জাডসে যাওয়ার জন্য পরিকল্পনা করছি তাহলে তৎক্ষনাৎ আমাকে বহিষ্কার করলো না কেনো? কেনো আমার ১৮ তারিখ দেয়া পুনরায় রিজাইন লেটার দেয়ার ৪০ ঘন্টা পরেও একশন নিলো না? কেনো আমি ফেইসবুকে পাব্লিক পোস্টে রিজাইন দেয়ার পরেও আমাকে জেইউডিও’র সিনিয়র বুঝায় কেনো আমার ছাড়া উচিৎ না। আমাকে মঙ্গলবার রাতে জেইউডিও’র প্রেসিডেন্ট ফোন দিয়ে বললেন জরুরী ইসি মিটিংয়ে আমি যেতে পারবো কি না।”
“কারণ জানতে চাইলে বলেন আমার কি কি অভিযোগ সেগুলা শুনবেন তাই। আমি লাস্ট ক্লোজার হিসেবে যেতে রাজি হই। সেখানে প্ল্যান করে আমার বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ আনা হয়, এবং আমার সব অভিযোগ নালিফাই করে, ব্যাক্তিগত আক্রমণ করে অনেক কথা বলে জিজ্ঞেস করা হয় আমি জাডসে যেতে চেয়েছি কি না। আমি স্বীকার করি হ্যাঁ চেয়েছি। এর জন্য জেইউডিও আমার বিরুদ্ধে যা খুশি তাই করতে পারে আমার সমস্যা নাই। এরপর তারা আমাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেয়, এবং ইগো স্যাটিসফাই করতে সেটা নিয়ে পোস্টও দেয়।”
“বলা ভালো, গতকাল জরুরি ইসি মিটিং চলাকালীন খাবারের বিরতির সময়ও জেইউডিও’র প্রেসিডেন্ট আমাকে ইমোশনালি বলেন, আমাকে নাকি কখনোই উনি জাডসের রুমে দেখতে পারবেন না, আমি এখনো জেইউডিওতে ফিরে আসতে চাই কি না। আমি উত্তর দেই সম্ভব না। তার অভিযোগ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর আমি সেখান থেকে বেরিয়ে গেলে সাবেক সভাপতি এবং সিনিয়র ইসির একজন আমাকে বোঝায় জাডসে এক মাস পরে গেলে কি হইত তোর? তাহলে তো আজ এই জিনিস ঘটতো না। (যেটা আমাকে ভালোবেসে বলেছে)। এর পর সেই সিনিয়র ইসি তার অনুশোচনা থেকে নিজেও পদত্যাগ করতে চান, কারণ উনি মনে করেন আমি সহ আরও একজনের পদত্যাগের ব্যাপারে উনিসহ অনেকেই দায়িত্বশীল আচরণ করতে পারেনি।”
“আমার কাউকে কোনো ব্যাখ্যা না দিলেও হতো, কিন্তু সত্যিই হাসি পায় তখন যখন দেখি আমাকে আর ফেরানো সম্ভব না। আমার বিরুদ্ধে অন্য কোনো অপরাধ প্রমাণ করা সম্ভব না তখন আমার ব্যাক্তিগত জীবনের সিদ্ধান্ত কে শৃঙ্খলাভঙ্গের নাম দিয়ে বহিষ্কার করার মতো শব্দগুলো ব্যাবহার করা হয়। মাঝে মনে হচ্ছে এত সময়, শ্রম, মেধা দিয়ে অন্যকিছু করলেও প্রতিদান হিসেবে অন্তত আজকের দিন দেখা লাগতো না।”
এ বিষয়ে বর্তমান নেতৃত্বের কেউ এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য না করলেও, সংগঠনের ভেতরে এ বক্তব্য নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে।